প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিকিম-কে লক্ষণ রেখা মনে করালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোট্ট রাজ্য সিকিমকে ১৪ টির বেশি হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট করার অনুমোদন কেন দিলো কেন্দ্র
শিলিগুড়ি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিকিম-কে লক্ষণ রেখা মনে করালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছোট্ট রাজ্য সিকিমকে ১৪ টির বেশি হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট করার অনুমোদন কেন দিলো কেন্দ্র! আমরা কাছে সব খবর আছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে উত্তরবঙ্গ সফর থেকে সওয়াল তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। মনে করিয়ে দিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের সময় সিকিমকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে এইট সিস্টারের বিশেষ তকমা পাইয়ে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভুমিকায় ক্ষোভ উঠে এলো এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কন্ঠে। মূলত সিকিমে একের পর এক বেআইনিভাবে হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট হওয়ার কারণে তিস্তার নাব্যতা হ্রাসে বিপর্যয় আর রুদ্র রূপের শিকার হতে হচ্ছে সিকিম সহ উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অংশ সমেত সমতলের দার্জিলিং জলপাইগুড়ি কালিম্পং কোচবিহার জেলাকে। বুধবার উত্তর-কন্যার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিকিমকে উদ্দেশ্যে করে বলেন ভদ্রতা একতরফা হয়না। সিকিমে ১৪ টা হাইড্রোলিক পাওয়ার করেছে। তিস্তার জলটা আটকে দেওয়া হলো,ওখান দিয়ে জল তখন যেতে পারছে না। ফলে সব জল এসে পড়ছে বাংলার বুকে।অথচ ওদের আমরা ভালোবাসি। আমাদের কত পর্যটক ওখানে যায় শিলিগুড়ির উপর দিয়ে তো তাদের যাতায়াত করতে হয়।কালিম্পঙ দিয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী এরপরই স্বর চড়িয়ে বলেন সিকিম এতগুলো হাইড্রোলিক পাওয়ার করলো কেন্দ্রীয় সরকার কেন অনুমতি দিলো? এনএইচপিসি-র কাছে জানতে চাও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ। এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন ওরা আমরাদের রুদ্ধ করে দিচ্ছে। আর আমাদের এখানে দুটো হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টের অনুমতি আমরা পেলাম না। মুখ্যমন্ত্রী আরোও খানিক কড়াল ভাষায় বলেন ছোট রাজ্য একটা এমপি আছে ওদের লোকসভায়,একটাই। বাংলা সবাইকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। আর আপনারা ওখান থেকে এখানে এসে শুধু বিনিয়োগ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী মতার কথায়- আর কিছু বললাম না।তবে এখানেই থেমে যায়নি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কেন্দ্রের ভূমিকাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেন-খবর আমিও রাখি। কাদের মাধ্যমে রাখা হয় আর কাদের দিয়ে। কারা রিয়েল ইস্টেট বিজনেসের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা, শুনেছি আমি। খবর আমার কাছেও আছে। কারন ওদের সুবিধে দার্জিলিং পাশে হলেও দার্জিলিং সাবসিটি পায় না। সিকিমতো ৯০ শতাংশ সরকারের সাবসিটি পায়, ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না। ওরাতো এইট সিস্টার। মেয়র গৌতম দেবকেও ইঙ্গিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ঠিক তো!
মূলত বিভিন্ন সময়তেই সিকিম হয়ে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতৃত্বদের মোটা অংকের নানান প্রজেক্টে বিনিয়োগের অছিলায় নানা অভিযোগ উঠে আসে সে বিষয়টির দিকেই মুখ্যমন্ত্রীর এই ইঙ্গিতবাহি মন্তব্য। এরপর বক্তব্য সংযোজিত করে মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন সিকিমের এইট সিস্টারের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন তিনিই। তার মন্তব্য- সিকিমকে এইট সিস্টার স্টেট আমরা করেছিলাম। অটল বিহারী বাজপেয়ীকে বাইরে থেকে আমরা যখন সমর্থন দিয়েছিলাম তৃণমূল থেকে আমরা সরকার গঠনের দিকে যাইনি। সে সময় চামলিং ছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। আমাদের আবেদন জানালেন তাদের এইট সিস্টার স্টেট করা হোক তখন আমরা বাজপেয়ীজি-কে বললাম দেখুন আমরা তো অন্য কিছু চাইনি, একটা বেঙ্গল প্যাকেজের মধ্যে সিকিম সিস্টার স্টেট হোক আমরা চাই। আমরাই করে দিয়েছি। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সতর্কধ্বনি – আর আজকে যদি আমি মনে করি বাংলার বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করছে, ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে তাহলে মনে রাখতে হবে যে যার রাজ্যকে নিজে সামলান। মুখ্যমন্ত্রী মমতার কড়াল বার্তা নিশ্বাস আমরাও ফেলতে পারি। কিন্তু মনে রাখতে হবে সব কিছুর একটা সীমাবদ্ধতা আছে। লক্ষণ রেখা অতিক্রম করা কারোরই উচিত নয়।
1 thought on “প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিকিম-কে লক্ষণ রেখা মনে করালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”
Comments are closed.