🔺🔺অভাব অনটনের সংসারে পুজোর মরশুমে সবুজ আতশবাজির হাত ধরে আশার আলো অভিজা খাতুন, শিল্পী সেন,সলেহাদের জীবনে। দীর্ঘ প্রায় ৪-৫বছর বাজি কারখানা তালা বন্ধ দশা কাটিয়ে সবুজ বাজি তৈরীর কাজ শুরু হতেই স্বস্তির ফিরছে হাতিরামজোত গ্রামে। বর্তমানে জোর কদমে চলছে সারি সারি খোলা আকাশের নিচে বসে সমস্ত রকম নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে বাজিতে মসলা ভরাট থেকে প্যাকেজিংয়ের কাজ। সরেজমিনে কারখানার কাজ খতিয়ে দেখে সন্তুষ্ট সারা বাংলা আতশবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায়
শিলিগুড়ি। অভাব অনটনে ভরা টানাটানির সংসারে পুজোর মরশুমে সবুজ আতশবাজির হাত ধরে আশার আলো অভিজা খাতুন, শিল্পী সেন,সলেহাদের জীবনে। দীর্ঘ প্রায় ৪-৫বছর বাজি কারখানা তালা বন্ধ দশা কাটিয়ে সবুজ বাজি তৈরীর কাজ শুরু হতেই স্বস্তির ফিরছে হাতিরামজোত গ্রামে। বর্তমানে জোর কদমে চলছে সারি সারি খোলা আকাশের নিচে বসে সমস্ত রকম নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে বাজিতে মসলা ভরা থেকে প্যাকেজিংয়ের কাজ। দুর্গাপুজোর হাতে গোনা কয়েকটি দিন আগে থেকেই শুরু হয় কাজ। নিরির গাইডলাইন মেনে যুদ্ধকালিন তৎপরতায় বাজি তৈরির কাজ করছেন ৮-৯জন মহিলা। শিলিগুড়ি শহরতলী থেকে যোজন দূরে ফাঁসিদেওয়া ব্লকের লিউসি পাকড়ি এলাকায় দুই বিঘা জমির ওপর বাজি কারখানাকে কেন্দ্র করেই এলাকার অধিকাংশ পরিবারের রুজি রুটি সংস্থান নির্ভর। প্রায় তিন দশকের কাছাকাছি জয়ন্ত সিংহ রায়-এর বাজি তৈরীর কারখানার সঙ্গে যুক্ত এই এলাকার হাতিরাম জোত গ্রামের পরিবারের মহিলা ও পুরুষেরা।
বাজি তৈরির বারুদের সঙ্গে মশলার মিশ্রণ থেকে কারখানা সামালের সব দায়িত্বেই নিযুক্ত রয়েছে এই গ্রামের পরিবারের মহিলা ও পুরুষেরা। তবে বাজিতে মশলার পুর ভরাট থেকে বারুদের সঙ্গে কতটা পরিমান সল্ট পিটার, বেরিয়াম মিলিয়ে মিশ্রণ হবে এলাকার মহিলা হাত তাতে পটু। বছর ভর৫-৬মাস কাজ করে আয়েই চলে সংসার। ১৯৯৮সাল থেকে এভাবেই সিংহদের বাজি কারখানাতে গ্রামের পরিবারের মহিলারা এই কাজে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে উঠে সংস্থান খুঁজে নেয়। তবে ছন্দ কাঁটে কোভিড জড়া আর এরপর একের পর এক বাজি কারখানা বন্ধ থেকে দেশজুড়ে বাজি শিল্প ধ্বংসের অশনি সঙ্কেত। কারখানার মালিক জয়ন্ত সিংহ রায় জানান কোভিডের প্রথম আঘাত এসে পড়ে। তারওপর ন্যাশনাল এনভায়রমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সক্লুসিভ সেফটি অর্গানাইজেশন (পেসো)র নির্দেশিকার ভিত্তিতে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণে জটিলতা তৈরি হয়। যার জেরে ৪-৫ বছর ধরে কারখানা বন্ধ প্রায়। তিনি বলেন আদতে বাজি কারাখানার অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রে সঙ্গে একটা বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এখানে খোলা আকাশের নিচে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজিয়ে রেখে সারিসারি কর্মীরা বসে বাজি তৈরি করেন। হাতেই সুরক্ষা ও নিরাপত্তা অবলম্বন করে তুবড়ি শহর অন্যান্য আতশবাজিতে বারুদ ও মশলা ভরা হয়। শুধুমাত্র তুবড়ি ও অন্যান্য আতশবাজির মোড়কে ব্যাবহৃত বোর্ড কাটিংয়ের কাজটা হয় যন্ত্রে। আর এই বাড়ি তৈরীর প্রক্রিয়ায় অধিকাংশই বারুদ মশলা মিশ্রণ ও ভরাটের কাজে দক্ষ মহিলারা। বাকি কারখানার নানান কাজ দেখভালের জন্য পুরুষ কর্মীরা রয়েছেন। তিনি বলেন তাই কর্মীদের পাশাপাশি কারখানা বন্ধের মুখে পড়ার খবরে বাজে ভেঙে পড়ে যুক্ত মহিলাদের মাথার উপর। কারখানার কর্মী অভিজা খাতুন, শিল্পী সেনেরা জানান আমরা বাজির কাজটা জানি। এই কারখানায় থেকেই দেখে শেখা। সিংহ রায় পরিবারের মালকিন নিজে হাতে ধরে শিখিয়েছেন।কোভিডের সময় বাজি কারখানা বন্ধের মুখে থাকায় প্রবল আর্থিক অনটনের দিন কাটে। জানা যাচ্ছে এই চার-পাঁচ বছর কারখানা বন্ধ থাকায় সংসারে অন্ন সংস্থানে বিকল্প পেশার খোঁজে ঘুরতে হয়। সলেহা খাতুন বলেন এই গ্রামে চাষাবাদ সে অর্থ হয় না।
সামান্য জমিতে যে ধান পাট হয় তার বীজ বপন এবং কাটার সময় কালটা খুবই কম। কোনোরকম মাসের পর মাস ১০-১২দিন কাজ হয় সে মজুরির টাকা দিয়ে সংসারে টানাপোড়েন মেটেনা। সংসারে আর্থিক অনটনে একটা সময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল এই মহিলা কর্মীরা। তবে রাজ্যের সবুজ বাজি তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে নামেন কারখানা মালিক। মালিকের তরফে সমস্ত গাইডলাইনকে মান্যতা দেওয়ায় পুজোর আগেই মেলে সুখবর। ১০ই অক্টোবর বাজি তৈরির লাইসেন্স পুনরায় ফিরে পায় এই কারখানা। স্বস্তি ফেরে গ্রামের এই কারখানার সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলিতে। এবারে হাতে সময় একেবারে কম থাকায় ৮-৯ জন মহিলা কর্মীদের নিয়ে বাজি তৈরির কাজ চলছে। খোলা আকাশের নিচে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাজিতে বারুদ মসলা ভরাটের কাজ করছেন মহিলারা। সম্প্রতি সারা বাংলা আতশবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় স্বর জমিনে কারখানায় কাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গুরুমান পর্যবেক্ষণ করেছেন। সম্পূর্ণ বেরিয়াম নাইট্রেট মুক্ত নীরের গাইডলাইন অনুযায়ী সল্ট পিটার ব্যবহার করে সবুজ পাখি তৈরি হচ্ছে। কর্মীরা প্রত্যেকে নির্দিষ্ট দূরত্বের পাশাপাশি মাথায় টুপি ও মাস্ক ব্যবহার করছেন। মাথাপিছু দিন প্রতি ২৫০ টাকা করে মজুরি হাতে আসছে এই মহিলা কর্মীদের। উৎপাদন বাড়লে মজুরি পূর্বের ন্যায় বাড়ানো হবে সেই লক্ষেই এগোচ্ছে মালিকপক্ষ।বিগত সময়তে ৩০ জন মহিলা এবং আরও বহু কর্মীরা এই কারখানার কাজের সঙ্গে যুক্ত। তারাও ফের ফিরতে চান তবে জায়গার সংকীর্ণতা থাকায় তাদের কাজে লাগানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। পাশাপাশি এবারে হাতে কম সময় থাকায় স্বল্প পরিমাণে সবুজ বাজি তৈরীর বলা যেতে পারে হাতে খড়ির মাধ্যমে স্বনির্ভরতা লক্ষ্যে এগোচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। তার সঙ্গে সবুজ বাজি তৈরির ক্ষেত্রে কাঁচামাল বাবদ উৎপাদন মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজি কারখানার মালিক জয়ন্ত সিংহ রায় বলেন- আশাহত হয়ে পড়েছিলাম তবে রাজ্য সরকার এই শিল্প ও শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমায় এটি একটিমাত্র কারখানা। তাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে করনার আগের সময়তে প্রচুর মানুষের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সে সময় দিন প্রতি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মাথাপিছু আয় হতো তাদের। আপাদত কারখানার স্টোরের আয়তন কম তাই এমিসেমি (ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্প) দপ্তরের মারফত রাজ্যের কাছে জমি চেয়ে আমি আবেদন জানিয়েছি। জমি মিলে আগামীতে এই অঞ্চলের আরো বহু পরিবারের কর্মসংস্থান হবে।
এদিকে সংগঠনের চেয়ারম্যান বাবলা রায় পূর্বেই জানান এবারে চাহিদা অনুযায়ি রাজ্যে ৪০% সবুজ বাজি তৈরী হচ্ছে। ৬০%আসছে তামিলনাড়ুর শিব কাশি থেকে। আগামী বছরের মধ্যে ১০০ শতাংশ সবুজ বাড়ি তৈরির টার্গেট রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশেষত বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ঠিকা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিলিগুড়ির কারখানা একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।