অপেক্ষার প্রহর শেষে চমক সাফারিতে!ভালোবাসার প্রেম নিবেদনের মরশুমেই সোমবার সাফারিতে আগমন হতে চলেছে ত্রিপুরা থেকে সিংহ দম্পতির। ত্রিপুরার দামাল সিংহ পুরুষকে প্রহড়ায় রাখতে সাফারি লায়ন এনক্লোজারে বসানো হয়েছে চারটি মোশন ডিটেক্টর সিসি ক্যামেরা। আরো অতিরিক্ত তিনটি এই ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত। অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বভাবের স্ত্রী সিংহ
শিলিগুড়ি। অপেক্ষার প্রহর শেষে চমক সাফারিতে!ভালোবাসা – প্রেম নিবেদনের মরশুমেই সোমবার সাফারির বুকে আগমন হতে চলেছে ত্রিপুরা থেকে সিংহ দম্পতি। গ্রীন করিডরে কড়া নিরাপত্তায় সাফারীতে সিংহ দম্পত্তির সঙ্গে আসছে স্পেক্টাক্যাল লঙ্গুর অর্থাৎ চশমা বানর, চারটি লেপার্ট ক্যাট ও চার কৃষ্ণ সার হরিণও। উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারির তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে নয়া অভিজ্ঞতা। উত্তরবঙ্গের বনভূমির নতুন অ্যাডভেঞ্চার পূর্ন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবেন পর্যটকেরা।
সেন্ট্রাল জু অথোরিটির গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যানিম্যাল এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরা সিপাহিজলা চিড়িয়াখানায় গিয়েছে সাফারীর রয়্যাল বেঙ্গল জুটি, ময়ূর,হিল ময়না, বিদেশি প্রজাতির পাখি তার বিনিময়ে সিংহ সহ বন্যপ্রাণীরা আসছে সাফারিতে।ত্রিপুরা থেকে সাফারিতে আসা পুরুষ সিংহের বয়স সাত বছর,স্ত্রী সিংহীর বয়সে ছোট ৩-৪বছর। বেশ কয়েক বছর আগে কর্নাটকের বানেরঘাটা জাতীয় উদ্যান থেকে ত্রিপুরায় আনা হয় এই পুরুষ সিংহকে।সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার সিংহ পরিবারের কিছুটা আগ্রাসী ও কর্তৃত্ব স্থাপনকারী স্বভাবের এই পুরুষ সিংহটি। আবার তার ঠিক উল্টো অবস্থানে ত্রিপুরার চিড়িয়াখানায় জন্ম সিংহীটি কিছুটা শান্তশিষ্ট স্বভাবের বলেই জানা গিয়েছে। আর তাই ত্রিপুরার দামাল সিংহ পুরুষকে প্রহড়ায় রাখতে সাফারি লায়ন এনক্লোজারে বসানো হয়েছে মোশন ডিটেক্টর সিসি ক্যামেরা। রাজ্য জু অথরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরী বলেন-
ইতিমধ্যেই সাফারির লায়ন জুটির এনক্লোজারের পরিকাঠামোর সু বন্দোবস্ত, যত্ন আর্তি,খাবার থেকে নিরাপত্তা ১০০শতাংশ নিশ্চিতকরনে রাজ্য বন দপ্তরের বন কর্তাদের বিশেষ সিকিউরিটি রান সম্পন্ন হয়েছে। স্পেশ্যাল সিকিউরিটি পর্যবেক্ষক টিমে আলিপুর জুয়ের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, আলিপুর চিড়িয়াখানার জু বায়োলজিস্ট, রাজ্য বনদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ শেষে রিপোর্টও পেশ করেছেন। ২০ হেক্টর বিস্তৃন সাফারির বনভূমির ওপর তৈরি সিংহ দ্বয়ের জন্য এনক্লোজারে নিরাপত্তার খাস ব্যবস্থা রয়েছে। বন দপ্তর সূত্রে খবর সাফারিরর সিংহ এনক্লোজারে পশুরাজ জুটির বিশেষ নিরাপত্তা ও নজরদারিতে অভয়ারণ্যে বন্যপ্রানের গতিবিধি শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক মোশন ডিটেক্টর সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রাজ্য বনদপ্তরের তরফে ইতিমধ্যেই চারটি অত্যাধুনিক মোশন ডিটেক্টর ক্যামেরা বসানো হয়েছে সাফারি সিংহ এনক্লোজারে। আরও তিনটে অত্যাধুনিক এই সিসি ক্যামেরা বসানো হবে বলেও রাজ্য বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। এতে সাফারী কর্তৃপক্ষের তরফে ২৪ঘন্টা সিংহদ্বয়ের গতিবিধির ওপর পুঙ্খানুপুঙ্খ নজরদারি রাখা সহজ হবে।
সব ঠিকঠাক থাকলে ১২ই ফেব্রুয়ারি আজ কংক্রিট শহর শিলিগুড়ির অদূরে নিরিবিলি পথ ধরে উত্তরের বন ভূমি শালুগাড়ার কাছে উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যানে আগমন হবে পশু রাজ স্ত্রী ও পুরুষ সিংহ জুটির। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মুড়ে বিশেষ লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সে গ্রীন করিডরের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে শিলিগুড়ির অদূরে শালুগাড়ার উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারি পার্কে এসে পৌঁছবে পশুরাজ সিংহ জুটি (স্ত্রী ও পুরুষ) সহ নতুন বন্য অতিথিরা। এই লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স-এ কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থা থেকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। যাত্রা পথে লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স- এর অভ্যন্তরে রয়েছেন ত্রিপুরা ও শিলিগুড়ি অদূরে সাফারির উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারির বন্যপ্রাণ চিকিৎসকেরা। এদিকে উত্তরের বনভূমির ইতিহাস প্রথম লায়ন সাফারি ও সিংহ চাক্ষুষ দর্শন ঘিরে যেমন উদগ্রীব রয়েছে পর্যটকেরা তেমনি নতুন ঠিকানায় সিংহ দম্পতি ঘরে সাজাতে তুমুল তোড়জোড় চলছে সাফারিতেও। বনের রাজত্ব কায়েমকারী দম্পতির খানাপিনা থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকছে রাজশাহী বন্দোবস্ত! প্ৰথমে আসা যাক নতুন ঘরের বিষয়ে সাফারির বনভূমিতে ২০ হেক্টর বিস্তীর্ণ এলাকা ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে লায়ন এনক্লোজার। সেই এনক্লোজারের অভ্যন্তরে ও বাইরে নিরাপত্তা বেষ্টনী যেমন মজবুত করা হয়েছে একই সঙ্গে সিংহ দম্পতির নতুন ঠিকানাকে সুখকর ও আরামপ্রদ
করে তুলতে নাইট শেল্টারে বসানো হয়েছে অত্যধিক গরমের হাত থেকে রক্ষায় এক্সটিক ফ্যান। রাজ্য বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে সামনে গ্রীষ্মকাল তাই উত্তরবঙ্গের ভ্যাপসা গরমে শীতলতার অনুভূতি এনে দিতে এই ব্যবস্থা। আবার শীতকাল বিদায় নিতে হাতে গোনা কটা দিন বাকি রইলেও এনক্লোজারের শেল্টারে গরম হাওয়া ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজনে হিটার সংযুক্ত করা যাবে সে বন্দোবস্তও রাখা হয়েছে। এবার আসা যাক নতুন রাজ অতিথির খাবারের মেনুতে। ডায়ের চার্ট ত্রিপুরার সিপাহী জলা চিড়িয়াখানা থেকে পাঠানো হয়েছে। এমনকি সিংহদ্বয়ের সঙ্গে ত্রিপুরা থেকে সাফারিতে আসছেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও। তবে রাজ্য বন দফতর
আলিপুর জুয়ের বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে চলেছে। জানা যাচ্ছে ত্রিপুরার ডায়েট চার্টের সঙ্গে আলিপুর চিড়িয়াখানায় সিংহদের খাবার সাপ্লিমেন্ট চার্ট মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর আলিপুর চিড়িয়াখানায় বহুদিন ধরে সিংহের রক্ষণাবেক্ষণে থাকা বিশেষজ্ঞ এবং বন্যপ্রাণ চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে একটি সমন্বয়ের ডায়েট চার্ট তৈরি করা হবে। তবে সিংহ দ্বয়ের মূল খাবারে থাকছে সর্বাধিক ১০কেজি পরিমাপে নিত্যদিন বিফ বা মোষের মাংস। তবে ছাগল বা চিকেন কোনোভাবেই সিংহের খাদ্যাভাসের মধ্যে নেই তাই সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হচ্ছে।৮ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গড়িয়ে ক্যাপচারিং প্রক্রিয়ার সম্পন্ন হতেই ৯ই ফেব্রুয়ারি সকালে ত্রিপুরার ঠিকানাকে আলবিদা জানিয়ে সিংহ দম্পত্তি সাফারীর বুকে নতুন ঘরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। যাত্রাপথে সময় লাগেছে প্রায় চার দিন।
বন্যপ্রাণীদের ওপর যাতে টানা যাত্রা পথের দখল না পড়ে তাই রবিবার রাতে আসাম পেড়িয়ে নিমতি ও হাসিমারার কাছে নাইট হল্ট করা হয়। সোমবার ভোর কিংবা সাত সকালেই সাফারিতে প্রবেশ করবে বন্যপ্রাণীরা। যদিও রাজ্য বনদপ্তরের জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি জানিয়েছেন সোমবার বিকেলের আগে অপেক্ষার অবসান ঘটবে। সাফারিতে প্রবেশ করবে পশুরাজ জুটি ও জোড়া চশমা বানর, চার লেপার্ট ক্যাট ও চারটি কৃষ্ণষারহরিণ।