শিলিগুড়ি

উত্তরবঙ্গের ছোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ৩১২৯কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা,এক লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ

উত্তরবঙ্গের ছোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ৩১২৯কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা,এমএসএমই-এর অধীনেই ৯০হাজার থেকে ১লাখ কর্মীদের কর্মসংস্থান।তিন জেলায় ব্যাংক ঋনের অংক ৭৫৮৯কোটি টাকা। ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা। ভুটানে বাজারকে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পের বিপণন নেই কাজে লাগাতে হবে। দার্জিলিংয়ের পাশাপাশি পাহাড়ের বুকে নতুন ঠিকানা কালিম্পঙ কর্শিয়াঙকে ব্যাপক প্রচারের আলোর আনার সিদ্ধান্ত।

 

 

শিলিগুড়ি। উত্তরবঙ্গের ছোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে ৩১২৯কোটি টাকার বিনিয়োগের সম্ভাবনা,এমএসএমই-এর অধীনেই ৯০হাজার থেকে ১লাখ কর্মীদের কর্মসংস্থান।এমএসএমই পোর্টালে উদ্যম পোর্টালে নিবন্ধিকরনের সংখ্যা ১,১৮,৯১৩টি। দার্জিলিংয়ের পাশাপাশি পাহাড়ের বুকে নতুন ঠিকানা কালিম্পঙ কর্শিয়াঙকে ব্যাপক প্রচারের আলোর আনার সিদ্ধান্ত।সমন্বয় বৈঠকে একাধিক জমি জট থেকে সমস্যার সমাধান রাজ্য শীর্ষ আধিকারীকদের। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা তিন জেলায় ক্ষুদ্র ছোট মাঝারি শিল্পের বিপুল সম্ভবনার আছে বলে জানান। শুক্রবার শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি শিল্পের সিনার্জি বাণিজ্যিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পঙ তিন জেলার ছোট মাঝারি ক্ষুদ্র শিল্প সম্ভবনা ও শিল্প উদ্যোগিদের নিয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা চলে। দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্র নাথ সিনহার সঙ্গে এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মেয়র গৌতম দেব, ডব্লিউবিএসআইডিসি ভাইস চেয়ারম্যান জয়প্রকাশ মজুমদার, ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি শিল্প দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজেশ পান্ডে উপস্থিত ছিলেন। এদিনে শিল্পপতি গোষ্ঠির ও শিল্প উদ্যমীদের তরফে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ক্ষুদ্র,ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্যাপিটাল হচ্ছে।শিলিগুড়ি দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে বিবাহের ডেস্টিনেশন হাব হয়ে উঠছে। মেফেয়ারের উদ্যোগে চাবাগানকে কেন্দ্র করে ইকো টি ট্যুরিজম তৈরী করা হচ্ছে। তিনটে চা বাগানে আরও এই ধরণের প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পে দার্জিলিং কালিম্পং জলপাইগুড়ির তিন জেলায় বেকার যুবক যুবতীরা ৪৪.৪৪কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের পেয়েছে। এদিন মঞ্চ থেকে সরকারি ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড সহ রাজ্য সরকারের শিল্প সহযোগী একাধিক প্রকল্পের উপভোক্তাদের হাতে পরিষেবা তুলে দেওয়া হয়।শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দিলীপ দুগার জানান শিলিগুড়িতে পাঁচটি বড় হোটেল আসতে চলেছে। ৫০০০কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। আগামীতে আরও ৫০০০কোটি টাকার প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে। আগে জমির এলএলইউসির জন্য হন্যে হতে হতো এখন দশদিনের মধ্যে করা হচ্ছে। তা সাতদিনে বাড়িতে বসে মানুষ যাতে অনলাইনে পেয়ে যায় তার টার্গেট রয়েছে। শিল্পপতি গোষ্ঠীর থেকেই তথ্য উঠে আসে গত ২০১১সালে উত্তরবঙ্গে দুটি এসআইপি পার্ক ছিল। এগারো বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২টিতে। এদিন ডব্লিউবিএসআইডিসি ভাইস চেয়ারম্যান জয়প্রকাশ মজুমদার জানান-আগে জমি ঘিরে সমস্যায় পড়তে হতো। আর এই রাজ্য সরকার শিল্পের জন্য সহজ শর্তে জমি বন্টন করেছেন। লং লিস্ট এবং ফ্রি হোল্ডে শিল্পপতিদের জমি দেওয়ায় তাদের শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ মিলছে সহজেই। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা জমি রাজ্য দেবে শিল্প গড়ে তুলুক শিল্পপতিরা। তিনি বলেন লুক নর্থ বেঙ্গল পলিসি টার্ম তৈরী করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গকে সামনে রেখে স্কীম নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের শিল্প উপযোগী পদক্ষেপে রাজ্য শিল্প উদ্যোগীরা উৎসাহিত। ক্ষুদ্র ছোট মাঝারি শিল্প প্রসারে ভুটানের তরফেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। জয় প্রকাশ বাবু জানান ভুটানের বিভিন্ন দ্রব্য এখানে ফুড প্রসেসিং হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার ভুটানকে উত্তরবঙ্গের সামগ্রী বিপণনের
বাজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন আগামী দিনে তিন জেলায় দার্জিলিং,জলপাইগুড়ি, কালিম্পঙ ৩১২৯কোটি টাকার বেশী বিনিয়োগের সম্ভবনা আছে। যাতে ৯০হাজার থেকে-১লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। দার্জিলিং ১৫২৩কোটি টাকা,জলপাইগুড়ি ১৪৪২কোটি টাকা,কালিম্পঙ ১৬৪কোটি টাকা বিনিয়োগ সম্ভবনার কথা জানান মন্ত্রী। তিন জেলায় ব্যাংক ঋনের অংক ৭৫৮৯কোটি টাকা।
লজিস্টিক সেক্টরে ৪৭০০কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে। মন্ত্রী বলেন দেশের মধ্যে ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি শিল্পের প্রসার উন্নয়ন এবং বিনিয়োগে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমাদের রাজ্য আমরা চাই প্রথম হতে।

এদিন দার্জিলিং নকশালবাড়ির অন্তর্গত বাটলা বাড়িতে কাঠের আসবাবপত্র তৈরী শমিল ও সিএফসি স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ২.৩২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে ৩৫টি ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত ৬০০ জন উপকৃত হবে। শিলিগুড়ির অদূরে ফাঁসিদেওয়ায় লুইসিপাকুড়িতে পাঁচ একর জমির উপর ২.৫কোটি টাকা ব্যয়ে সবুজ আতশবাজি সংরক্ষণ ও বিক্রির জন্য বারটি স্টোর ও ১২ টি স্টল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমএসএমই। জলপাইগুড়িতে দুটি আইটি পার্ক তৈরি হতে চলেছে বলে এদিন মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন মন্ত্রী। ৭২ একর এই জমিতে ৪০টি ইউনিট কাজের যুক্ত রয়েছে, সরাসরি হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের দরজা খুলে গিয়েছে এই শিল্প পার্কের হাত ধরে। আরো ৭১ একর জমি জুড়ে শিল্প পার্ক হবে। জলপাইগুড়িতে ডব্লিউবিএসআইডিসির উদ্যোগে আরও দুটি নতুন আইটি পার্ক চালু হতে চলেছে দ্রুত। আগামীতে শিলিগুড়িতে রিয়াল স্টেটের হাত ধরে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে বলে জানান মন্ত্রী। এদিকে ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নতিকরণেও একইভাবে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে দপ্তর। সে তালিকায় রয়েছে শিলিগুড়ি বাঘাযতীনে ১৭.৯৪ লক্ষ টাকা অনুমোদনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে সেলাই মেশিন ও পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হবে। সরাসরি ৩০ জন মহিলা উপকৃত হবে। ১ কোটি ৯লক্ষ টাকা ব্যয়ে দপ্তরের তরফে দার্জিলিং খড়িবাড়িতে সুপারি গাছের পাতা দিয়ে অভিনব ভাবে থালা বাটি তৈরির ক্লাসটার গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পের সঙ্গে ২২০টি পরিবার যুক্ত রয়েছে। কালিম্পং বেডনের সানটুক গ্রামের মাশরুম ক্লাস্টার হয়ে গড়ে উঠেছে। পাহাড়ি মাশরুম আগামীতে বড় বাজার দখলে নেবে বলেই আশাবাদী শিল্প ও বাণিজ্যিক মহল। এই প্রকল্পের সরাসরি ১৩৫ টি পরিবারের কর্মসংস্থানের দরজা খুলে গিয়েছে। এছাড়াও কালিম্পং উল ও সিল্ক ও পাটজাত সামগ্রী দিয়ে কার্পেট তৈরির প্রকল্প ফলপ্রসূ হওয়ায় আগামীতে আন্তরাষ্ট্র বাজার বিপনণের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে এদের দার্জিলিং হিলকুইনের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে কালিম্পং কার্শিয়াং এর দেস্টিনেশন কে প্রচারের আলোয় তুলে আনার মধ্য দিয়ে পর্যটন শিল্পের প্রসারের বিষয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনাও আলোচনা চলে। দপ্তরিয় সচিব জানান ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে প্রচারে। নেপাল ভুটানের সীমান্তকে বাণিজ্যিক আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। এদিন দপ্তরের তরফে ক্ষুদ্র ছোট শিল্প গোষ্ঠীগুলিকে জানানো হয় শিল্প সাথীর সিঙ্গেল উইন্ডোজ সিস্টেম হওয়ায় ১৩০টি দপ্তরের একসঙ্গে কাজ করছে সেখানে অনলাইনে এক ক্লিকে হাতের মুঠোয় নিজস্ব প্রকল্প আবেদন ও যাবতীয় কাজ করতে পারবেন তারা। একটি হোয়াটসএপ নম্বর চালু এয়েছে সহায়তায়।

এদিন ইএসআই হাসপাতালের জমি মরগেজ না মেলায় তাজ আটকেস রয়েছে বলে জানান শিল্পপতি সে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দপ্তরের সচিব। আমবাড়ির ফালাকাটায় সিএফসি-র কাজ মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধনের আবেদন করেন শিল্পপতিরা। রাস্তা নির্মাণ ও তার সঙ্গে যদি একটি সেলিঙ কাউন্টার খোলা যায় সে দাবি জানান। চা বদলি ফ্যাক্টরি সিজিএসটি পুনর্বিবেচনার আবেদন প্রস্তাব করেন এদিন শিল্পউদ্যোগি তরুণ মিত্তাল। একই সঙ্গে টিম্বার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয় তাদের শিল্পির ক্ষেত্রে ফায়ার লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়িয়ে এক বছরের তুলনায় যদি পাঁচ বছর করা হয় তাহলে আরো প্লাইউড শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে, সে বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার কথা জানান সচিব। শিলিগুড়ি আইটি পার্কে ডাব্লুবিএসইডিসিএল খুব সুন্দর করে গোপরিকাঠামো করে তুলেছে তবে সেখানে আবর্জনা নিয়ে পুরনিগমের ভূমিকায় অভিযোগ তোলেন শিল্প গোষ্ঠীরা। তারা বলেন সেখানে একটি গার্বেজ ইয়ার্ড প্রয়োজন কারণ পুরো নিগমের সাফাই কর্মীরা পার্কের ভেতর থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করেন না একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরের তরফে পুরনোকামের আবর্জনা বিভাগকে সে কথা জানানো হলেও তা হয়নি। বিষয়টি পুরো নিগমের কমিশনার কে দেখার নির্দেশ দেন দপ্তরের সচিব। পাশাপাশি আন্ডারগ্রাউন্ড টেবিলের জন্য রাস্তা খননের পর তা পুনর নির্মাণের বিষয়টিতে এদিন বিদ্যুৎ বন্টন ও সরবরাহ দপ্তর জানায় পুরো নিগম এবং পিডব্লিউডিকে অর্থ দেওয়া হয়েছে তারা চাইলে করতে পারেন।