চ্যালেঞ্জিং অপারেশন পুলিশের, নুহ-র অপরাধ গ্রাম থেকে মাস্টার মাইন্ডকে গ্রেপ্তার করে চেক মেট পুলিশের

শিলিগুড়ি

🔺🔺চ্যালেঞ্জিং অপারেশন পুলিশের, নুহ-র অপরাধ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার মাস্টার মাইন্ড। স্থানীয় মহিলা কিশোরদের ঘেরাও থেকে অপরাধীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে চেক মেট শিলিগুড়ি পুলিশের। এটিএম লুট গ্যাংয়ের মাস্টার মাইন্ড হরিয়ানার কুখ্যাত নুহ-গ্যাংয়ের কুরশিদ,জাভেদ,ইজরাইল।

 

শিলিগুড়ি। চ্যালেঞ্জিং অপারেশন পুলিশের, নুহ-র অপরাধ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার মাস্টার মাইন্ড।মহিলা কিশোরদের গোল দিয়ে অপরাধীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে চেক মেট শিলিগুড়ি পুলিশের। ধৃত এটিএম লুট গ্যাংয়ের মাস্টার মাইন্ড হরিয়ানার কুখ্যাত নুহ-গ্যাংয়ের কুরশিদ,জাভেদ,ইজরাইল। উত্তরবঙ্গে দেশের কুখ্যাত নুহ গ্যাংয় ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।আর সেই গ্যাংয়ের আঁতুরঘর নুহ-র জঙ্গল রাজে হানা দিয়ে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের দাবাঙ পুলিশের অপারেশন সাকসেস। নুহ-র গুরওয়ানত গ্রাম যেন মনে করিয়ে দিলো বলি সিনেমা শোলের রামগড়-কে! কয়েক দশক পড়েও কিতনে আদমির গাঁ কাটা দেওয়া গব্বরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে পাহাড় আকৃতির টিলা পেড়িয়ে নুহ-র অপরাধের পীঠস্থান হয়ে ওঠা গ্রাম গুরবন্ত। একদিকে খানিকটা ভৌগোলিক কারন আর তার সঙ্গে অপরাধীদের ঠিকানা হওয়ায় অঘোষিত নির্দেশে টিলা পেড়িয়ে গ্রামে ঢোকার রাস্তা দূর্গম। তারওপর গ্যাংয়ের খোচড়দের নজরদারিতে সাদা পোশাকে সাধারণ বেশভূষায় থাকা পুলিশ কর্মীদেরও প্রতিপদে পড়তে হয় চ্যালেঞ্জের মুখে। ১৮ই জুন গভীর রাতে শিলিগুড়ি প্রধান নগর থানার অন্তর্গত চম্পাসাড়ি এলাকায় এটিএম কাউন্টারে হানা দিয়ে পরপর দুটি এটিএম যন্ত্র গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে ১০লক্ষ ৪২ হাজার টাকা লুট করে ফারার হয়ে যায় দুষ্কৃতি গ্যাং। তদন্তে নেমে নুহ গ্যাংয়ের যোগ হাতে আসে পুলিশের। আর এরপর তদন্তে ঠাকুরগঞ্জ পর্যন্ত দুষ্কৃতি গ্যাংয়ের গাড়িকে পিছু নেয় পুলিশ।

প্রথম ধাপে ধুরন্ধর গ্যাং পুলিশের নজর এড়াতে সক্ষম হলেও তদন্তে এক ধাপ এড়িয়ে ভিন রাজ্য হরিয়ানায় পাড়ি দেয় প্রধাননগর থানার পুলিশের তদন্তকারী টিম।হরিয়ানার নুহ জেলা শহরে পৌছে আসল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় পুলিশ টিমকে! সাদা পোশাকে তদন্তকারী টিম হরিয়ানার ভাড়ার গাড়ি নিয়ে নুহ-তে অভিযানে পৌছতেই আড়াল আবডাল থেকে সন্দেহজনকদের নজরদারি চলছে তা টের পান ধুঁধে তদন্তকারীরা। সজাগ পুলিশ রুট বদল করে পর্যটকদের মতোই ঘুরে ফিরে দেখতে লাগেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে স্থানিয় থানায় পৌছলেও খুব বেশি সদার্থক হয়নি। বরং থানার আশপাশে খোচরদের তাঁক করা চোখ বাতলে দেয় আইনী শাসন শক্ত হাতে কায়েম করা এখানে দুর্বিষহ। কাঠামোগত ব্যবস্থার বিপরীতে সেখানে শুধুই চলে গ্যাং ওয়ার্ল্ড-এর রাজত্ব। আর এখানেই অভিযানে গ্যাং ওয়ার্ল্ডের ডেরায় ঢুকে এটিএম লুটের মাস্টার মাইন্ডকে পাকড়াও করে আনা সহজতো নয়ই বরং কতটা কঠিন হতে চলেছে তার বুঝতে পেরেই  কৌশল বুঁনে এগোয় শিলিগুড়ি পুলিশের প্রধাননগর থানার ধুঁধে তদন্তকারী টিম। টিলা পেড়িয়ে গুড়ওয়ান্ত -এর পথে পা রাখতেই নুহ গ্যাংয়ের অপরাধীদের গ্রামে ঢোকার মুখে পেড়তে হয় রক্ষীর প্রহরা। গোটা গ্রাম জুড়ে গ্যাংয়ের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্ত যে গ্রামে বহিরাগত প্রবেশ করা মাত্র সাংকেতিক এলার্ট পৌঁছে যায় এটিএম লুটের নুহ গ্যাংয়ের মূল পান্ডা কুরশিদ-এর কাছে। মূল রাস্তা থেকে ২ কিলোমিটার দূর্গম পথে মোটরবাইকে চালিয়ে পৌছতে হয় গ্রামে। পুলিশ গ্রামে ঢুকতেই মহিলা কচিকাঁচা একঝাঁক কিশোরেরা পুলিশের অভিযানকারীদের ঘিরে নানাভাবে ক্রমাগত অপারেশনে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করতে লাগে। তবে গোটা দেশের মধ্যে কুখ্যাত অপরাধ ইনডেক্সে শীর্ষস্থানে থাকা নুহ গ্যাংয়ের ডেরায় শিলিগুড়ি পুলিশ দাবাং ভূমিকায় মোটর বাইক নিয়ে হানা দিয়ে একেবারে কলার চেপে ধরে শহরে এটিএম লুটের গ্যাং লিডার খুরশিদের। পুলিশ সূত্রে খবর গ্রামবাসীদের ফোনে দেওয়া সাংকেতিক এলার্ট সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছয় নুহ গ্যাংয়ের পান্ডা খুরশিদ-এর কাছে। রীতিমতো নিজের বাড়ির ডেরা থেকে বেরিয়ে মোটরবাইকে স্টার্ট দিয়ে পালানোর ছক কষে ফেলে সে। তবে দূর্গম পথ দিয়ে প্রধাননগর থানার পুলিশ সে বিষয়ে আগেভাগে বুঝতে পেরেই দূরন্ত গতিতে মোটর বাইক ছুটিয়ে হাতে নাতে পাকড়াও করে ফেলে। অন্য গ্রাম থেকে লোক জমায়েত হয়ে মহিলা কিশোররা মিলেমিশে পুলিশের টিমকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে তবে দ্রুত সুকৌশলে অভিযুক্তকে নিয়ে গ্রাম ছাড়ে শিলিগুড়ি পুলিশ। স্থানীয় থানায় চাপের মুখে পড়তে হতে পারে সে আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল আর সেই কারণে দূরবর্তী হরিয়ানার নুহ জেলার একটি থানার হেফাজতে রাখা হয় অভিযুক্তকে। অন্যদিকে পান্ডাকে গ্রেফতারের পরই তার যোগসূত্র ধরে নুহ গ্যাংয়ের অভিযুক্ত দুই দুষ্কৃতীর আলিপুরদুয়ার আসামে নতুন অপারেশনের ছক বাঞ্চাল করে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাক চালক ও খালাসির বেশ ধরে গ্যাংয়ের দুই সদস্য জাভেদ ও ইজরাইল প্রতিবেশী রাজ্য আসাম উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলা এলাকায় নতুন অপারেশনের পরিকল্পনা মাফিক রেইকির কাজে নেমে পড়েছিল। সে ছক ভেস্তে দিয়ে বারোভিষা থেকে অভিযুক্তদের পিছু নিয়ে শিলিগুড়ির শালুগাড়া সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলে জানান প্রধান নগর থানার আইসি বিডি সরকার। দেশ জুড়ে এটিএম লুটের অপারেশনের আঁতুরঘর এই এলাকা। রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্যাংম্যান তৈরি করা হয় এলাকায়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি ওয়েস্ট বিসি ঠাকুর জানান ঘটনার সাতদিনের মাথায় নুহ এলাকা থেকে এটিএম লুটের দুষ্কৃতিদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চার থেকে পাঁচজন অপারেশন চালায়। অধরা অভিযুক্তদের খোঁজে তদন্ত চলছে। শহর জুড়ে নিরাপত্তা ছাড়া অভিভাবকহীন ভাবে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এটিএমগুলি নিয়ে ব্যাংকের ভূমিকায় উদ্বেগ ব্যক্ত করছে পুলিশ কর্তারা।