🔴টোটো নিয়ন্ত্রণে আনতে শিলিগুড়িতে কড়া ভূমিকায় নামলো পুলিশ প্রশাসন। জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে টোটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। পুজোর আগে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খুলে প্রতি থানা ভিত্তিক এলাকায় নজরদারি চালাবে কমিশনারেট। অলিগলিতে পেট্রোলিঙ,পাড়ায় পাড়ায় সমস্যা মেটাতে হাজির থাকবে পুলিশ। শিলিগুড়ি শহরে জলন্ত যানজট সমস্যা সমাধানে মহারন্দা সেতু ও চিত্তরঞ্জন উড়ালপুল কে কেন্দ্রবিন্দু ধরে চারজনে শহরকে বিভক্ত করে পকেট রুট ধরে চলবে টোটো
শিলিগুড়ি। টোটো নিয়ন্ত্রণে আনতে শিলিগুড়িতে কড়া ভূমিকায় নামলো পুলিশ প্রশাসন। জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে টোটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। পুজোর আগে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খুলে প্রতি থানা ভিত্তিক এলাকায় নজরদারি চালাবে কমিশনারেট। অলিগলিতে পেট্রোলিঙ,পাড়ায় পাড়ায় সমস্যা মেটাতে হাজির থাকবে পুলিশ। শিলিগুড়ি শহরে জলন্ত যানজট সমস্যা ! বানিজ্যিক শহর শিলিগুড়ি প্রসারে বাড়ায় দীর্ঘ বছরের পর বছর যানজটের জলন্ত সমস্যা দিন প্রতিদিন বেড়েই চলছে। আর শহরের এই যানজট সমস্যার কারণ হিসেবে লাগামছাড়া কয়েক হাজার টোটোর দৌরাত্বকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে শহর বাসী। শহরে ৪০০০নথিভুক্ত রেজেস্ট্রেশন যুক্ত টোটো রয়েছে অথচ বাস্তবে নাম্বার বিহীন টোটোর সংখ্যা ২৫হাজারেরও বেশি। ভিন ও রাজ্য ভিন জেলা থেকে টোটো নামছে নিত্যদিন শহরের রাস্তায়।দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও বিস্তারিত পরিকল্পনার পর বৃহস্পতিবার অ্যাকশন মোডে নামে শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশ। এদিন শিলিগুড়ি জাতীয় সড়ক ৩১-এ টোটো চলাচলের ওপর সম্পূর্ণ রূপে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। জাতীয় সড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে ধরে সড়কে টোটোর উপর নিষেধাজ্ঞার পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে আদালতের। তবে তা সত্ত্বেও শহরে জাতীয় সড়ক ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে অবাধে চলছে টোটো চলাচল।এদিন কড়াকড়ি ভাবে জাতীয় সড়কে টোটোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় পুলিশের তরফে। ট্যাফিক পুলিশ এদিন জাতীয় সড়কে চলাচল করা টোটো পাকড়াও করে সচেতন করে নিষেধাজ্ঞা মান্যতা নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি শহরে মুখ্য সড়ক গুলিতে টোটোর ওপর কড়াকড়ি জারি করা হয়। এদিন নাম্বার বিহীন টোটোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সচেতন করা হয় প্ৰথম দিনে চালকদের। শহরের হিলকার্ট রোড, জলপাইমোড়, হিলকার্ট রোড, এস এফ রোডের মুখ্য সড়কে যাতায়াত কারী টোটো গুলিকে আটক করা হয়। প্ৰথমদিনে মুখ্য সড়কে চরাচরে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় টোটো চালকদের। শিলিগুড়ির মুখ্য সড়কে টোটো চলাচল করবে না সে সচেতনতা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নাম্বার বিহীন টোটোগুলিকে। ইতিমধ্যেই পুরনিগমের সঙ্গে যৌথভাবে পুলিশ বৈঠক করে শহরকে জোনে বিভক্ত করে একটি মডেল পিপিপি প্রেজেন্টেশন সামনে আনে। বেশ কয়েক মাস আগে বৈঠকে এই পরিকল্পনা সামনে রাখা হয় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তরফে। জানা গিয়েছে বেশ কিছুদিন যাবত শিলিগুড়ি পুলিশ পরিবহন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ে এবং টোটো মালিকদের সঙ্গে কথা বলে একটি সমীক্ষা জানিয়ে চার রঙের শহরকে ভাগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে এই ট্রাফিক মাস্টার প্ল্যান অনুসারে টোটো ওপর নিয়ন্ত্রণ টানতে শহরের চিত্তরঞ্জন উড়ালপুল এবং মহানন্দা সেতুকে কেন্দ্র বিন্দুতে রেখে চার রঙে শহরকে চার জোনে ভাগ করা হবে। এই ট্রাফিক মাস্টার প্ল্যান প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। শিলিগুড়ি শহরে এই ট্রাফিক মাস্টার প্ল্যান কার্যকরী হলে চিত্তরঞ্জন উড়ালপুল ও মহানন্দা সেতু উপর টোটো যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। আইন অনুসারে অর্থাৎ কম গতি সম্পন্ন যানবাহনের ক্ষেত্রে উড়ালপুলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে শিলিগুড়ি শহরে সমস্ত মুখ্য সড়ক বিশেষত হিলকার্ট রোড, সেবক রোড বিধান রোডে টোটো যাতায়াতে সম্পূর্ণ রূপে নিয়ন্ত্রণ টানা হবে। শহরের কয়েক হাজার যে টোটো রয়েছে তার চূড়ান্ত সমীক্ষা চালিয়ে পকেট রুট ধরে নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারিত করে পারমিট দেবে পুলিশ। এতে নির্দিষ্ট এলাকার টোটো চালকেরা নির্দিষ্ট জোনে ইরিকশা চালানোর পারমিট পাবেন।শিলিগুড়ি পরিবহন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী২০১৯সাল থেকেই রাজ্য সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে টোটোতে লাগাম টানার কাজ শুরু হয়। টোটোর টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার প্রদান করে ই রিক্সার পথে হাটে প্রশাসন। টোটো স্ক্র্যাপ করে ই রিক্সায় নামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিলিগুড়ি শহর ও মহকুমা এলাকায় বর্তমানে ৪১৭৯টি টোটো চিহ্নিত করে টিন নম্বর দেওয়া হয় সে সময়। এর মধ্যে ৩৬০০ টোটোর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে ই রিক্সায় বদল করা হয়েছে। শিলিগুড়ি পরিবহন দপ্তরের নথি অনুযায়ী ৪১৭৯ টির মধ্যে ৩৮০টি টোটো রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় যায়নি। পুরনিগমের তরফে জানানো হয় এই মাস্টার প্ল্যানের আয়তায় যানবাহন আইনের অন্তর্ভুক্ত করে টোটো চালকদের ড্রাইভিঙ লাইসেন্স ও পরিচয় পত্র প্রদান করবে পুলিশ। তবে টোটো মালিকদের একের অধিক টোটোর রেখে অসাধু ব্যাবসা করা চলবে না। একের বেশি টোটো কিনে মালিকানা কারবার সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হবে। টোটো মালিক নিজে টোটো চালক হলেই মিলবে পারমিট। এতে শহরে চলা প্রায় ২৫হাজারের কাছাকাছি বেআইনি টোটোর ওপর লাগাম টানা সম্ভব হবে।ছোট ছোট রুটে নির্দিষ্টজনের বিভক্ত করে ই রিকশার পারমিট দেওয়া হবে। নির্দিষ্টজনের বাইরে কোন টোটো চলাচল করতে পারবে না। এতে একদিকে যেমন শহরের কেন্দ্র হিলকার্ট রোড, সেবক রোড বিধান রোড এর মত মুখ্য সড়ক গুলিতে টোটো চলাচলে নিয়ন্ত্রণ টানা হবে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের যে গাইডলাইন রয়েছে সেমতো এশিয়ান হাইওয়ে ও জাতীয় সড়কে ইরিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞাকে মান্যতা পাবে। পাড়ার অভ্যন্তরে অলিগলি পকেট রুট ধরে বিকল্প রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট রুট নির্ধারণ করে পারমিট দেওয়া হবে। দেশজুড়েই টোটোর দাপটের সমস্যা জলন্ত। এই পরিকল্পনা কার্যকরী হলে আগামীতে গোটা দেশের শিলিগুড়ি শহর টোটো নিয়ন্ত্রণে মডেল হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে টোটো চালকদের পরিচয় পত্র ও তাদের নথি পুরো নিগমের পেশ করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।রেজিস্টার নম্বর যুক্ত টোটো চালকদের পরিচয় পত্র প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশদের। এতে যাত্রীদের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।প্রাথমিক পরিকল্পনার পাশাপাশি বিস্তারিত সমীক্ষা সম্পন্ন করে পুজোর আগেই শিলিগুড়ি ট্রাফিকের বিরাট পদল এনে নয়া মডেল নাগর হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার এই সুধাকরের বক্তব্যে। পুলিশ কমিশনার জানান শহরে পুজোর আগেই ট্যাফিক পরিকল্পনায় বিরাট বদল আনা হবে। অন্যদিকে শিলিগুড়ি শহরে নিরাপত্তা নিয়ে একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনাকে রূপায়ণের পথে অগ্রসর হচ্ছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট সে কথা এদিন জানান কমিশনার। তিনি বলেন শিলিগুড়ি শহরকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মুড়ে ফেলতে শহরে বিভিন্ন রাস্তায় বিকল হয়ে পড়া সিসি ক্যামেরা বদলে নতুন আধুনিক সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। পাশাপাশি শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হচ্ছে কন্ট্রোল রুম। এই কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ঘন্টা শিলিগুড়ি শহরের প্রতিটি থানা ভিত্তিক এলাকার ওপর নজরদারি চালাবে কমিশনারেটের পুলিশ কর্তারা। রাস্তা সম্প্রসারণের কাজের জন্য সেবক রোডের বেশ কিছু জায়গায় সিসি ক্যামেরা গুলি খুলে ফেলা হয়েছে সেখানে নতুন আধুনিক সিসি ক্যামেরা বসবে বলে জানান কমিশনার। পাশাপাশি শিলিগুড়ি শহরে অপরাদ দমন ও নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করতে পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে পৌঁছে যাবে পুলিশ। দ্রুত চলতি মাস থেকেই পাড়ায় পুলিশিসিং শুরু হবে। এতে যে কোন সমস্যা ক্ষেত্রে সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন এলাকা বাসীরা। এছাড়া অলিতে কলিতে পুলিশি টহলদারি বানানো হচ্ছে শহর জুড়ে। এদিকে শহরে বেশ কিছু সাম্প্রতিককালে চুরির ছিনতাই এর মত ঘটনার সামনে এসেছে। পুজোর মুখে চুরি ছিনতাই রুখতে অতিরিক্ত ২টি করে থানা পেট্রোলিং টিমের টহলদারি বাড়ানো হচ্ছে।