🔺🔺মৃত্যুর ২৪ঘন্টা পেড়িয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি মাটিগাড়া খুন কাণ্ডে নিহত গৃহবধূর পরিবারের। খুনে অভিযুক্ত স্বামী রাহুল রায়ের সাতদিনের পুলিশ হেফাজতে নির্দেশ দিলো আদালত। খুনে ব্যবহৃত হাতুড়িটি যাবে ফরেনসিক টেস্টে। আত্মীয়র অনুপস্থিতিতে অপরাধীকে শাস্তি দিতে অভিযোগ দায়ের করলেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য
শিলিগুড়ি। মৃত্যুর ২৪ঘন্টা পেড়িয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি মাটিগাড়া খুন কাণ্ডে নিহত গৃহবধূর পরিবারের। মঙ্গলবার খুনে অভিযুক্ত স্বামী রাহুল রায়ের সাতদিনের পুলিশ হেফাজতে নির্দেশ দিলো আদালত। সোমবার শিলিগুড়ি মাটিগাড়া ব্লকের চাউমিন মোড় নারায়ণ পল্লী এলাকায় স্ত্রীকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে খুন করে স্বামী। অপরাধে ব্যবহৃত হাতুড়িটি সোমবারই হাতে আসে পুলিশের। যা ফরেন্সিক টেস্টে পাঠানো হচ্ছে। স্ত্রীকে খুন করে দেহের পাশে বসে দরজা বন্ধ ঘরেই প্রায় কয়েক ঘন্টা কাটায় অভিযুক্ত স্বামী। ভোর রাতে স্ত্রীকে খুন করে স্বাভাবিক ভাবে এলাকায় ঘোরাফেরাও করতে দেখা যায় অভিযুক্তকে। পরে দুপুর নাগাদ প্রতিবেশি ব্যক্তির কাছে এসে তার হাত ধরে স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে মেরে ফেলেছি তা জানায় অভিযুক্ত স্বামী।স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণেই খুন করেছে সে তা পুলিশকে জেরার মুখে অকপট জানিয়েছে অভিযুক্ত। পুলিশ সোমবার অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর থেকেই দফায় দফায় জেরায় সাঁড়াশি চাপ দিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর জেরার মুখে অভিযুক্ত জানিয়েছে স্ত্রীর অন্য পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক চলছিল। বিগত দুই বছর ধরে এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক চলছিল গৃহবধুর বলে জানিয়েছে অভিযুক্ত। একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল দাম্পত্য কলহ তুঙ্গে ওঠে। বিভিন্নভাবে স্ত্রীকে ধমক চমক দিয়ে বশে আনার চেষ্টা করে অভিযুক্ত। জেরার মুখে সে জানিয়েছে কোনভাবেই তার কথায় তোয়াক্কা করেনি স্ত্রী। সূত্রের খবর পুলিশী জেরায় অভিযুক্ত রাহুলের বয়ান- এদিন রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে ১১ টা নাগাদ ভাড়া বাড়ির মূল গেট বন্ধ করে ঘরে ঢুকে পড়ে সে। এরপরই আট বছরের শিশু কন্যা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এদিকে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে কেন্দ্র করে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় স্ত্রীর সঙ্গে রাহুলের। রাতে ফোনে প্রেমিকের সঙ্গে কথপোকথন চলছে স্ত্রী সোনালী কুন্ডুর সে সন্দেহে অশান্তি বাঁধে দুজনের মধ্যে। স্ত্রীকে কটুক্তি করতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে গৃহবধূ সোনালী দেবীও। গভীর রাত ২-২.৩০টা নাগাদ অশান্তি তুমুলে ওঠে। পুলিশ সূত্রের খবর জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে সে স্ত্রীকে প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলে। গৃহবধূ পাল্টা তার কথায় দমেনি। পাল্টা স্ত্রী রাহুলকে জানিয়ে দেয় যা করছি বেশ করছি। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে অভিযুক্ত। ঘরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে স্ত্রীর মাথায় পরপর তিন দফায় আঘাত করে সে। প্রথম আঘাতেই লুটিয়ে পড়ে স্ত্রী তবে মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরপর আরও দুই দফায় মাথার পেছনে আঘাত করে সে। যাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় গৃহবধূর। তবে এরপর একেবারে পেশাদার ভঙ্গিতে ঠান্ডা মাথায় রক্ত বয়ে যাওয়া আটকাতে প্লাস্টিক মুড়ে মাথার পেছনে ক্ষত অংশে বড় প্লাস্টিক গামলা দেয় সে। যাতে সকাল হলেও মায়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার কিছুই আভাস প্রথমে পায়নি নাবালিকা আট বছরের শিশু কন্যাটি।প্রতিবেশী মহিলার বয়ান অনুযায়ী সকাল ৭টা নাগাদ অভিযুক্ত রাহুল ও শিশু কন্যাকে দেখলেও সোনালী দেবীর দেখা না পাওয়ায় সে নাবলিকার কাছে মা কোথায় তা জানতে চান। নাবালিকা জানায় মা ঘুমিয়ে রয়েছে। মনে করা হচ্ছে মেয়ে সকালে মায়ের খোঁজ করলে অভিযুক্ত রাহুলই মেয়েকে মিথ্যে বলে ভুল বুঝিয়েছিল।স্থানীয় সূত্রের খবর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পেশাদারি ঠান্ডা মাথায় খুনির মতোই একেবারে স্বাভাবিক আচরন ছিল তার। মেয়েকে নিয়ে এলাকা ঘুড়িয়ে নিজেও এলাকায় ঘোরাফেরা করে।
দুপুরে ওই প্রতিবেশী মহিলা ফের রাহুলের কাছে তার স্ত্রী সোনালী দেবী কোথায় রয়েছেন তা জানতে চাইলে সে জানায় মালিকের কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে খিচুড়ি রাধতে গিয়েছে গৃহবধূ। এদিকে ঘটনার জানাজানির পর পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে অভিযুক্তকে করা হলেও গ্রেপ্তার নিহত গৃহবধূর পরিবার বা কোন আত্মীয়-স্বজনের শিলিগুড়ি বা পার্শ্ববর্তী জেলায় খোঁজ মেলেনি। ঘটনার জানাজানি হতেই অভিযুক্তের প্রতিবেশী সম্পর্কে পাতানো দিদি নাবালিকাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেই রয়েছে বর্তমানে নাবালিকা। তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে যে কারনে শিশু কন্যাটি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাকে কোনভাবেই মায়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিব্রত করতে চাইছে না পুলিশ। মৃতে নিহত মহিলার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের খোঁজ না মেলায় ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০২ খুনের মামলা রুজু করে এগোচ্ছে পুলিশ।
তদন্তে এদিন আদালতকে অপরাধে ব্যবহৃত হাতুড়িটির বিষয়ে তদন্তকারী আধিকারিক জানান। ওই হাতুড়িটি ফরেনসিক টেস্টের জন্য পাঠানো হবে বলেই সূত্রের খবর। এদিকে ওই নাবালিকা মেয়েটি মামলায় অন্যতম সাক্ষ। নাবালিকা শিশুকন্যাটির মানসিক স্তিতি স্বাভাবিক হলেই আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তার গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হবে। সূত্রে জানা গিয়েছে গৃহবধূ বাংলাদেশের নিবাসী, বিবাহ করে এখানে আসে, ফলে এখানে তার কোন আত্মীয়-স্বজন রয়েছে কিনা তা খোঁজ করছে বলে।আত্মীয়ের খোঁজ না মেলায় নাবালিকা শিশুটির নিরাপত্তা নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ শিশু সুরক্ষা কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকারি সহযোগী সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করবে বলেও জানা গিয়েছে।