🔺🔺শিলিগুড়িতে স্কুল পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের মামলার দোষীর মৃত্যুদণ্ডের পর রাজসাক্ষি নাবালিকাকে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাহসিকতার পুরস্কার প্রদানের পরিকল্পনা, প্রশাসনিক তোড়জোড় শুরু।জেলা শাসক ও মহকুমা শাসকের কাছে লক এবং প্রশাসনিক তরফ থেকে যাবে প্রস্তাব।
শিলিগুড়ি। শিলিগুড়িতে স্কুল পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে খুনের মামলার দোষীর মৃত্যুদণ্ডের পর রাজসাক্ষি নাবালিকাকে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাহসিকতার পুরস্কার প্রদানের পরিকল্পনা, প্রশাসনিক তোড়জোড় শুরু।জেলা শাসক ও মহকুমা শাসকের কাছে লক এবং প্রশাসনিক তরফ থেকে যাবে প্রস্তাব। স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ১৩মাসের মাথায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে শিলিগুড়ি আদালত। ২২জন সাক্ষী এই নৃশংস ঘটনার সাক্ষ্য দেন আদালতে। তার মধ্যে অন্যতম সাক্ষি হিসেবে ছিলেন নবম শ্রেণীর (বিচার প্রক্রিয়ার সময়তে নবম শ্রেণীতে পাঠ্যরতা)নাবালিকা ছাত্রী।ঘটনার দিন ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে স্কুল থেকে ফেরার পথে নবম শ্রেণীর ছাত্রী প্রথম কিছু অপরাধ ঘটছে তা আন্দাজ পায়। শিলিগুড়ি অভয়া কাণ্ডে মাটিগাড়ার একাদশ শ্রেণির নাবালিকা স্কুল ছাত্রীকে প্রথমে মাটিগাড়ার মোটাজোত এলাকার পরিত্যক্ত বাড়ি ও ঝোপঝাড়ে নিয়ে আসে অপরাধী মহম্মদ আব্বাস। সেখানেই তাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। রাজ্যের সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিরল থেকে বিরলতম নৃশংস ঘটনা বলে অ্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন নাবালিকার শরীরে একুশটির বেশি ক্ষতচিহ্ন ছিল। হাইমেন ছিঁড়ে ফেলা হয়। আধেল ইট দিয়ে মাথা ও মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়। সরকারি আইনজীবি জানিয়েছেন আর এই আধেলা ইট দিয়ে মাথা ও মুখ থেঁতলে দেওয়ার সময়তেই সে ধুপ ধুপ শব্দ প্রথম কানে আসে ওই নবম শ্রেণীর ওই এলাকার বাসিন্দা স্কুল ছাত্রীর। তার পাশেই প্রাচীর ঘেঁষে ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়ি। ঠিক কি বুঝতে পেরেছিল এই নাবালিকা! নিরাপত্তার স্বার্থে নাবালিকার নাম ও পরিচয় গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। জানায় নবম শ্রেণীর ওই স্কুলছাত্রী স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছিল পায়ে হেঁটে। ঘেরা দেওয়া ওই পরিত্যক্ত বাড়ি ও ঝোঁপের ভেতর থেকে নাবালিকার চিৎকার শুনতে পেয়েছিল। আর শুনতে পায় ধুপ ধুপ শব্দ। সে ছুটে যায় তার বাড়ির সামনে, দাঁড়িয়ে থাকা তার মা ও কাকীমা এবং সঙ্গে থাকা প্রতিবেশী মহিলাদের বিষয়টি জানায়। এরপরই এলাকা নিবাসী এক যুবক সহ দুই মহিলা ছুটে যায়। মা কাকিমায়ের সঙ্গে নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী নাবালিকাও ছুটে গিয়েছিল হয়তো শেষ রক্ষা করতেই। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি!তারা ছুটে গিয়ে ওই ঝোপঝাড়ে অপরাধী যুবককে পেছন থেকে দেখতে পায়। তারাই প্ৰথম পুলিশকে জানায় ছাই রঙের টি শার্ট পরিহিত সাইকেল নিয়ে এক যুবককে পালিয়ে যেতে দেখছেন তারা।এরপর পরিত্যক্ত নির্মাণের কাছে যেতেই ভেতরে রক্তাক্ত স্কুল ইউনিফর্মে নাবালিকাকে দেখতে পায়।অপরাধীর জামার রঙ, গড়ন আর সাইকেল নিয়ে পালিয়ে যাওয়া এই তিনটি সূত্র ধরে তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনার রাতেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চিহ্নিত করে হিসেব মিলিয়ে ফেলে। ঘটনার দিন ২১শে আগস্টের সে রাতেই কয়েক ঘন্টার অপরাধীকে গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি পুলিশ। আর এই অন্যতম সাক্ষি নবম শ্রেণীর নাবালিকার বয়ান রেকর্ড বন্দি করার প্রথমদিকে শুনানির সময় থেকে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অন্যতম সাক্ষি এই স্কুল ছাত্রীর নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে আদালত। ঐতিহাসিক এই রায়দানের ক্ষেত্রে অন্যতম সাক্ষী ১৩ বছর বয়সী নাবালিকার এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সাহসীকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বারংবার এই মামলার বিশেষভাবে নিযুক্ত রাজ্যের তরফে সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়।নির্ভীকতার প্রশংসা করেছেন পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর। তার সাহসী পদক্ষেপকে স্যালুট জানাচ্ছে গোটা পুলিশ, প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য বাসী। এবারে কুর্নিশ জানিয়ে ছাত্রীকে যোগ্য সম্মাননা প্রদান পরিকল্পনাও নিয়েছে ব্লক ও স্থানীয় প্রশাসন।
মাটিগাড়া ব্লকের বিডিও বিশ্বজিৎ দাস জানান-বিষয়টি বিস্তারিত জানা হলো। নাবালিকার প্রতিবাদী স্পৃহা এবং সাহসিকতাকে স্যালুট জানাতে চায় সরকারি ভাবে ব্লক প্রশাসন। ব্লক ভিত্তিক কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে সাহসিকতার বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। এই নাবালিকাকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে বিশেষ সাহসিকতার পুরস্কার প্রদানের পরিকল্পনা আছে।জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের বিষয়টি দৃষ্টিগোচরে এনে নাবালিকাকে কন্যাশ্রীর বিশেষ সাহসিকতা পুরস্কার প্রদানের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে। অন্যদিকে শিলিগুড়ি পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার বলেন- নাবালিকা মেয়েটি অত্যন্ত প্রশংসানীয় সাহসিকতা দেখিয়েছে। তাকে তার সাহসিকতার যোগ্য সম্মান দেওয়া আমাদের কর্তব্য। আমি সরকারি তরফে এই নাবালিকা ছাত্রীটিকে যোগ্য সম্মাননা প্রদানের প্রস্তাব জানাবো জেলা শাসক এবং মহকুমা শাসকের কাছে। অন্যদিকে এক বছর যাবৎ শিলিগুড়ি অভয়া কাণ্ডে নিহত নির্যাতিতা একাদশ শ্রেণীতে পাঠ্যরতা নাবালিকার মাটিগাড়ার স্কুল জুড়ে যে তোলপাড়-আলোড়ণ তৈরি হয়েছিল। মাটিগাড়ার ওই হিন্দি মাধ্যম সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা দেবনাথ জানান-কঠিন সর্বোচ্চ শাস্তির প্রতীক্ষায় ছিল আমাদের গোটা বিদ্যালয়। আমাদের স্কুলের ছাত্রীর সঙ্গে যে নৃশংসতা করা হয়েছে দ্রুত সে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে দৃষ্টান্তমূলক এই রায়কে স্বাগত জানাই। আমাদের হারানো নির্যাতিতা ছাত্রীটিকে বিচার এনে দিয়েছে। অন্যতম সাক্ষী নাবালিকা স্কুল ছাত্রী শুনেছি, তার নির্ভীকতাকে কুর্নিশ জানিয়ে আমাদের স্কুলের তরফ থেকে সম্মান প্রদান করা হবে।তিনি বলেন শনিবার রায় দানে বিকেল গড়িয়ে যায়। রবিবার বিদ্যালয়ের ছুটি থাকায় সোমবার স্কুলের প্রার্থনার লাইনে সকল ছাত্রছাত্রীদের এই ঐতিহাসিক রায়ের বিষয়ে জানাবো। প্রত্যেকেই হয়তো কম বেশি প্রচার মাধ্যম সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন তবু প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে তাদের বুঝিয়ে বলবো। পাশাপাশি তিনি জানান এই ঘটনার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে প্রতি মাসে বিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। যাতে ছাত্রছাত্রীরা প্রত্যেকেই এই বিষয়গুলিতে সজাগ থাকতে পারে এবং সমাজ থেকে এই অপরাধ মুছে ফেলতে সক্ষম হয়ে ওঠে আগামী দিনে।নিহত নির্যাতিতার নাবালিকার মা জানিয়েছেন আমি একমাত্র কন্যা সন্তানকে হারিয়েছি। ওই মেয়েটি আমার সন্তানকে বিচার এনে দিয়েছে সে আমার মেয়ের স্থানে থাকবে। চিরজীবন ওই ছোট্ট মেয়েটির কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো আমরা।