🔻🔻 সন্তানের সঙ্গে বিচ্ছেদ যন্ত্রণার পর এ যেন আদর মাখা মায়ের কোলে ফেরার কাহিনী! কার্শিয়াং বনদপ্তরের দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় মায়ের থেকে ছিন্ন হয়ে পড়া। চিতাবাঘ শাবকেরা ফিরে পেলো মায়ের স্পর্শ।
শিলিগুড়ি। সন্তানের সঙ্গে বিচ্ছেদ যন্ত্রণার পর এ যেন আদর মাখা মায়ের কোলে ফেরার কাহিনী! কার্শিয়াং বনদপ্তরের দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া চিতাবাঘ শাবকেরা ফিরে পেলো মায়ের স্পর্শ। বনদপ্তরের কর্মী এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের সঙ্গে আবেগঘন বন্য চিতা শাবকদের মায়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের সাক্ষী হলো হাঁসখোঁয়া চা বাগান। প্রকৃতি যেন কখনও কখনও নিজের হাতে গল্প লেখে,সেই গল্পে ছড়িয়ে থাকে বন্যপ্রানের আকুলতা, উদ্বেগ বাকশক্তিহীন জীবের প্রগাঢ় ভালোবাসার টান। বুধবারের প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীদের এমনই কাহিনীর কেন্দ্রে রয়েছে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুটি চিতাবাঘ শাবক আর বাঘিনী চিতার উদ্বেগের সঙ্গেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বনদপ্তরের টিম।
বনদপ্তরের কার্শিয়াং ডিভিশনের অন্তর্গত বাগডোগরা রেঞ্জের হাঁসখোঁয়া চা বাগান এলাকায় বুধবার সাত সকালে চা শ্রমিকেরা বাগানে কাজে নামতে গিয়ে লক্ষ্য করেন বাগানের নালায় দুটি ফুটফুটে চিতা শাবক। প্রথমত আশেপাশে কোথাও ঝোপের আড়ালে ঘাপটি মেরে রয়েছে মা চিতা সে আশঙ্কায় চা শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক দানা বাঁধে।
ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত পৌঁছে যায় বাগডোগরা রেঞ্জের বনদপ্তরের কর্মীরা। দুটি চিতা শাবককে নালায় সে সময় আতঙ্কিত গুটিশুটি অবস্থায় দেখতে পেয়ে পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধা হয়নি বনকর্মীদের। তৎক্ষণাৎ এলিফ্যান্ট স্কোয়াড পৌঁছে গোটা এলাকার ঘিরে ফেলে। কোনভাবে জনমানুষের কোলাহল এবং সংস্পর্শে এলে মা চিতা ফিরিয়ে নেবে না বন্যপ্রাণীদের সহজাত স্বভাবশত শাবকদের। তাই নির্দিষ্ট দূরত্বে সরিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয়দের বন দপ্তরের তরফে। নির্ধারিত দূরত্বে থেকে বনদপ্তরের তরফের ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি চালানো হয় দুই চিতা শাবকের গতিবিধির উপর। চা বাগানের ওই এলাকায় প্রহরায় মোতায়েন করা হয় বন কর্মীদের এলিফ্যান্ট স্কোয়ার্ড টিমকে। যাতে চিতা নির্দিষ্ট পথে ফিরে এসে তার শাবকদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে সে কারণে আড়ালে থেকে ট্র্যাপ ক্যামেরার মধ্য দিয়ে পুরো এলাকার উপর নজরদারি চালায় বনকর্মীরা। নির্দিষ্ট সময়, ঘন্টার পর ঘন্টা কাটতে লাগে! অবশেষে আসে সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত।
বনকর্মীরা জানতেন, যেখানেই থাকুক না কেন, মা চিতাবাঘ নিশ্চয়ই খুঁজে চলছে তার সন্তানদের। সেমত অবশেষে মা চিতাবাঘটি ফিরে আসে চা গাছের মাঝ বরাবর থাকা নিকাশির কাছে। চা বাগানের নিরালা নীরবতা ভেঙে হঠাৎ ভেসে ওঠে চেনা ডাকে সাড়া দেওয়ার শব্দ! সে যেন এক অদ্ভুত মুহূর্ত। মা চিতা শাবকদুটির কাছে ফিরে এসে মুখে করে শাবকদের নিয়ে বনাঞ্চলের দিকে ছুটে যায়। মায়ের আশ্রয়ে বন্যপ্রাণের ফেরার সে মুহূর্ত যেন গোটা চা বাগানকে আবেগে ভরিয়ে তোলে।বনকর্মীরা কিছু দূরে দাঁড়িয়ে নীরবে পর্যবেক্ষণ করেন, স্থানিয় চা শ্রমিকদের চোখেও ধরা দেয় সন্তান ও মায়ের পুনর্মিলনের আবেগ। কার্শিয়াং ডিভিশনের ডিএফও দেবেশ পান্ডে বলেন- খবর মেলার পরেই বনকর্মীরা তৎপরতার সঙ্গে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়ে নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলে এলাকা। বাগডোগরা রেঞ্জের বন কর্মীরা এবং এলিফ্যান্ট স্কোয়াড টিম দ্রুত ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি কাজে নিয়োজিত ছিল।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সহায়তা করেছে। অপরদিকে এই পুরো ঘটনা একবার ফের মনে করিয়ে দিলো বনদপ্তরের কাজ শুধু বনাঞ্চলের আইন রক্ষা নয়, বনদপ্তর প্রকৃতি বন্যপ্রাণ এবং মানুষের মাঝে নিবিড় যোগসূত্র ধরে পারস্পারিক নির্ভরশীলতার সম্পর্কগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে।আর সেই কাজ কার্শিয়াঙ ডিভিশন বনদপ্তর যে কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলছে তার উদাহরণ হয়ে রইল মা চিতার সঙ্গে শাবকদের এই পুনর্মিলনের ক্ষণ।