ব্যাংকের আর্থিক তছরূপের ২৬বছরের পুরনো সিবিআই মামলায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা আদালতের।
শিলিগুড়ি। ব্যাংকের আর্থিক তছরূপের ২৬বছরের পুরনো সিবিআই মামলায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে রায় দিলো আদালত।
বুধবার ১৯৯৪ এ উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্ৰীয় গ্রামীণ ব্যাংকের লক্ষ লক্ষ টাকা আর্থিক তছরূপের ঘটনায় অভিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার ও মূল মাস্টার মাইন্ড সিনিয়র হেড ক্লার্ককে দোষী সাবস্থ্য করে কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলো শিলিগুড়ি জর্জ স্পেশ্যাল সিবিআই আদালত। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার মনোজ চক্রবর্তী ও সিনিয়র হেড ক্লার্ক সুভাষ চন্দ্র রায় সহ দীপক বণিক তিন ব্যাংক কর্মীর নামে কর্মরত ব্যাংকে লক্ষ লক্ষ টাকার আর্থিক তছরূপের মামলা করে সিবিআই।
বেনামি ব্যাংক খাতা তৈরি করে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেনের দুর্নীতি চক্রের সিবিআই মামলায় তিনজনের নাম উঠে আসে। চক্রের মাস্টার মাইন্ড সুভাষ চন্দ্র রায়। একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বেনামী খাতা তৈরী করে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির নাম স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক একাউন্টে মোটা অংকের আর্থিক তছরূপের কিংপিন সুভাষ বাবু। প্রায় ২৬বছর ধরে চলে শিলিগুড়ি মহকুমার উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রিয় গ্রামীন ব্যাংকের আর্থিক তছরূপ কাণ্ডে সিবিআই মামলা।
শিলিগুড়ি সিবিআই আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ি শাখার উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্ৰীয় গ্রামীন ব্যাংকে ১৯৯১-৯৪সালের সময়কালে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা বেআইনী আর্থিক তছরূপ কান্ড সামনে আসে। তিনটি ভুয়ো বেনামি ব্যাংক খাতা তৈরী করা হয়। যে নাম,ঠিকানা, ছবি ব্যাংক খাতায় ব্যবহার করা হয় তার কোনোরকম বাস্তবিকতা নেই। জাল নথি তৈরি করা থেকে আজগুবি এই সমস্ত ব্যাংক খাতা তৈরি করে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা করে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে দুই অভিযুক্ত। এই খাতা গুলি ব্যবহার করে ব্যাংকের চেক বই কিংবা রশিদে তুলে মোটা অংকের টাকা নেওয়া হয়।
জাল নথি তৈরি থেকে এই পুরো ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সিনিয়র ক্লার্ক সুভাষ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্ৰীয় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় এই আর্থিক তছরূপের অভিযোগ রয়েছে। চা বাগান এলাকায় মৃত ব্যাক্তির নাম জাল করে বেআইনী অর্থিক লেনদেন কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সুভাষ বাবু। আজ প্রায় ২৬ বছর আগে অন্য মামলার তদন্তে নেমেই খরিবাড়ি শাখায় আর্থিক তছরূপের বিষয়টি সিবিআইয়ের সামনে উঠে আসে।১৯৯৬ সালে খড়িবাড়ি ব্যাংক শাখার আর্থিক তছরূপ কাণ্ডে সিবিআই মামলা করে। কিংপিন তৎকালীন ব্যাংক সিনিয়র ক্লার্ক সুভাষ ও ওই শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মনোজ কুমার চক্রবর্তী এবং ক্লার্ক দীপক বনিক তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। টানা দুই দশক ধরে চলে শুনানি। মামলা শুরুর প্রায় ১০বছর পর ২০১৬সালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। ২১জন সাক্ষ্য এবং হ্যান্ড রাইটিং এক্সপার্ট যাবতীয় তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বুধবার শিলিগুড়ি জর্জ স্পেশ্যাল সিবিআই আদালত ক্লার্ক তথা ক্যাশিয়ার দীপক বনিককে বেকসুর খালাস করে। তাকে জালে ফাঁসিয়ে স্বাক্ষর করে মাস্টার মাইন্ড সুভাষ বাবু। এদিন জর্জ স্পেশ্যাল সিবিআই আদালতের মানববেন্দ্র মোহন সরকারের এজলাসে অভিযুক্ত সুভাষ চন্দ্র রায়কে ৪৬৮ফরজারী ও প্রতারণা, ১৩(১)(ডি) অপরাধ মূলক কার্যের জন্য দোষী সাবস্থ্য করে চারবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অনাদায় ১লক্ষ টাকা জরিমানা এবং অপর অভিযুক্ত তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার মনোজ চক্রবর্তিকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অনাদায় ৩০হাজার টাকা জরিমানা ধ্যার্য করে। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার মনোজ চক্রবর্তির আইনজীবী অভয় চট্টোপাধ্যায় জানান যুবক বয়সে মামলা হয়েছে। সিবিআইয়ের দীর্ঘসূত্রিতার জেরে এখন ষাটোর্ধ্ব অবসর গ্রহন করেছে সে সময়তে দাঁড়িয়ে তাদের সাজা কাটতে হবে।
সিবিআই আদালতের এদিনের বিচারের বিরুদ্ধে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা কথা জানান তিনি। যদিও তিন বছরের কম সময়সীমার কারাদণ্ডের নির্দেশের প্রেক্ষিতে জামিন মঞ্জুরের আইন রয়েছে। আইন অনুযায়ী মনোজ বাবুর জামিনে মঞ্জুর হয়েছে।
41 thoughts on “২৬বছরের পুরনো সিবিআই মামলায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষনা”
Comments are closed.