অসামান্য তার চন্ডি পাঠ, অনড়গল পড়ে চলে কোরান একসঙ্গে দুইয়েই অনবদ্য রাজ্যে অষ্টম স্থানাধিকারি শিলিগুড়ির সংখ্যালঘু ছাত্রী জুনাইনা পারভীন। আর্থিক প্রতিকূলতাকে হারিয়ে জুনাইনা এখন বস্তি বাসীর চোখে আইকন। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দিয়েই মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরনের উড়ান ভরতে চায় পরিবার
শিলিগুড়ি। অসামান্য তার চন্ডি পাঠ, অনড়গল পড়ে চলে কোরান একসঙ্গে দুইয়েই অনবদ্য রাজ্যে অষ্টম স্থানাধিকারি শিলিগুড়ির ছাত্রী জুনাইনা পারভীন। নিম্নবিত্ত পরিবারের টিনের চাল দেওয়া দুই কামড়ার ঘরে কোনোক্রমে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে এগিয়ে চলা জুনাইনা এখন বস্তি বাসীর চোখে আইকন। বাবা জাকির হুসেন ট্যুর ট্রাভেল সংস্থার সঙ্গে যুক্ত তাই কোভিডের সময়তে প্রবল আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় পরিবারকে। তবে পারিবারিক সেই আর্থিক প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে তার এই সাফল্য শিলিগুড়ির শহরের মুখোজ্জ্বল করেছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের মেধা তালিকায় রাজ্যে অষ্টম ও দার্জিলিং জেলায় প্রথম স্থানাধিকার করে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনো করে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় শিলিগুড়ি সারদা শিশু তীর্থের এই ছাত্রী। এ ঠিক যেন ঠিক রুপোলি পর্দার স্লামডগের গল্প। অদ্যম ইচ্ছে শক্তিকে ভর করে শিক্ষার উন্মুক্ত আলোয় সাফল্য পৌঁছে এই বয়সেই এক ভিন্ন জীবনবোধের কথা বলছে একরত্তি এই মেয়ে। বস্তি এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারের এই মেয়ে শুধু যে মেধাবী তা নয় একইসঙ্গে গীতা পাঠ,চন্ডি পাঠ, সরস্বতী বন্দনা থেকে আরবি ভাষার কোরান পাঠেও দ্বিগজ। মহনন্দা নদী ঘেষা বস্তি এলাকা পুরনিগমের চার নম্বর ওয়ার্ডের দূর্গানগর কলোনি এলাকায় টিন ও ক্রঙ্কিটের দুই কামড়ার বাড়িতেই বসবাস।বাবা জাকির হুসেইন ও মা লিপি বানুর একমাত্র কন্যা জুনাইনা। শিলিগুড়ি পুরনিগমের এই ওয়ার্ড বস্তি এলাকা অধ্যুষিত। জুনাইনার বাড়ি থেকে শহরের মূল রাস্তার ওঠার পথ এখনও দূর্গম, নেই পথ বাতিও। এদিন সকালে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ছোট্ট এই বাড়ীতে ভিড় জমতে লাগে বস্তি বাসীদের। শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ সহ যুব তৃনমূলের তরফে সংবর্ধিত করা হয়। বস্তিবাসী খুদে পড়ুয়াদের চোখে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে মেধাবী এই ছাত্রী। এদিকে হাতে খড়ির পর থেকে শিলিগুড়ি সারদা শিশু তীর্থে পাঠ্যরত জুনাইনা। সেখান থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য তার। বিভিন্ন বিষয়তে তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলা ৯৮,ইংরেজি ৯৬,গণিতে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞান ৯৮,জীবন বিজ্ঞান ৯৯, ইতিহাস ৯৭,ভূগোল ১০০।
জীবন বিজ্ঞানই পছন্দের বিষয় রাজ্যে অষ্টম স্থানাধিকারী ছাত্রীর।জুনয়না জানায় নিট দিয়ে চিকিৎসক হতে চায় সে। এখন থেকেই নিজে বাড়িতে নিটের জন্য ইংরেজির প্রতি আরও দখল বাড়াতে প্রস্তুতি নিতে শুরুও করে দিয়েছে সে। কিন্তু বাবা জাকির হুসেন বলেন কোভিডের সময় আর্থিক অনটনের কারনে ভিন্ন শহর মালাবাজারে ছয়মাস পরিজনের বাড়িতে থাকতে হয়েছে। তারপরও এত ভালো রেজাল্ট করবে মেয়ে ভাবতে পারিনি। চিকিৎসক হতে চায় সে তাতে অনেক খরচ। রাজ্য সরকারের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধে পেলে মেয়ের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরন করা সম্ভব হবে। অপরদিকে মাধ্যমিকের সময় ৭-৮ঘন্টা পড়াশুনো করতো।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সহযোগিতার পাশাপাশি ৬-৭ জন গৃহশিক্ষক ছিল তার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান ও স্কুল ও শহরের গর্ব।
পড়াশুনোর পাশাপাশি মেধাবী ছাত্রীর অবসরের সঙ্গী রবীন্দ্র সঙ্গীতের চর্চা। তবে বরাবরই স্কুলে প্রথম হয়ে আসা জুনাইনার ভর্তির সময়তে আশ্চর্য হয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কারন সম্পূর্ণ হিন্দু সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে চলা ভিন্ন ভাবধারার একটি স্কুলে সংখ্যালঘু পরিবারের মেয়ের ভর্তির কারন জানতে চেয়ে বাবা মাকে ডেকে পাঠান স্কুলের আচার্য্য। মা লিপি বানু বলেন আচার্য্য সাফ বলেছিলেন তোমরা মুসলিম সমুদয়ের এই স্কুলে হিন্দু ধর্মীর আচারকে মানতে হয় পড়ুয়াদের। লিপি দেবী বলেন সবটা জেনেই ভর্তি করি মেয়েকে। এখন শুধু চন্ডি পাঠ, সরস্বতী বন্দনায় থেমে নেই বরং গীতা পাঠ, চন্ডি পাঠ করে একাধিক পুরস্কার নিয়ে এসেছে সে। আবার আরবী ভাষার বাড়িতে কোরান পাঠও করে মেয়ে। জুনাইনা জানায় তার পরিবারের ভাবনা চিন্তা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান তাকে সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে উঠে সব মানুষ আসলে সমান তা শিখিয়েছে।