🔺পাক চর সন্দেহে ধৃত মহিলার ভারতীয় বংশদ্ভূত প্রমানের মরিয়া চেষ্টা। ভারতে আসা পাবজি প্রেমিকা সীমা হয়দারের ঘটনাকে অনুকরন করেই পাকিস্থান থেকে নেপাল হয়ে সন্তানকে নিয়ে ভারতে মহিলা অনুপ্রবেশকারী। সীমা হায়দার নাগরিকত্ব পেলে এ পথ ধরে তিনিও পেতে পারেন ভারতীয় নাগরিকত্ব সে ধারণা নিয়েই নেপালের কাঁকরভিটা হয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা। সন্তানেকে নিজের কাছে ফিরে পেতে ডিএনএ টেস্টের পথেও যেতে পারেন আইনজীবীর মদতে মহিলা
শিলিগুড়ি। পাক চর সন্দেহে ধৃত মহিলার ভারতীয় বংশদ্ভূত প্রমানের মরিয়া চেষ্টা। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা পাবজি প্রেমিকা সীমা হয়দারের ঘটনাকে অনুকরন করেই পাকিস্থান থেকে নেপাল হয়ে সন্তানকে নিয়ে ভারতে মহিলা অনুপ্রবেশকারী। সীমা হায়দার নাগরিকত্ব পেলে এ পথ ধরে তিনিও পেতে পারেন ভারতীয় নাগরিকত্ব সে ধারণা নিয়েই নেপালের কাঁকরভিটা হয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা। পুলিশ ও নিরাপত্তার এজেন্সির জিজ্ঞাসাবাদে সে কথাই জানিয়েছে পাক চর সন্দেহে ধৃত মহিলা (শাইস্তা হানিফ,বয়স ৬১) অনুপ্রবেশকারী। ইতিমধ্যেই পাকিস্থানের করাচি নিবাসী সৌদি আরবের বসবাসকারী ওই মহিলা কলকাতায় আত্মিয়ের ঠিকানা ও আসামের শিলচরের বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন। পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে,গুপ্তচর তত্ত্ব থেকে সরে আসছে না পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থা গুলি। গত ১৫ই নভেম্বর দিল্লি হয়েই নেপাল থেকে ভারতে প্রবেশ করে ধৃত পাক মহিলা অনুপ্রবেশকারীর। ভারতে প্রবেশের মুখ ভারত নেপাল ভারত চেক পোস্ট এলাকায় এসএসসবি হাতে নাতে আটক করে। এরপরই খরিবারড়ী থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের সূত্রে জানা গিয়েছে খড়িবাড়ি থানার হাজতে দফায় দফায় পুলিশ এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এসটিএফ, সিবিআই এই মামালার তদন্ত করছে।
দফায় দফায় রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। পুলিশ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদে পাক গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত মহিলা শাইস্তা হানিফ জানিয়েছে করাচি থেকে স্বামী মহম্মদ হানিফের সঙ্গে ২০০৮সালে ভারতে এসেছিল। সে সময় পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে বৈধ ভাবেই মুম্বাই এসেছিল তারা। পুলিশের তরফে সে তথ্য যাচাইয়ে ইতিমধ্যেই মুম্বাই পুলিশকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রের খবর যদি কখনও তারা বৈধ ভিসা নিয়ে এদেশে প্রবেশ করে থাকে তাহলে তা উপর মহলের রেকর্ড ঘাটলেই বেড়িয়ে আসবে। ধৃত পাক বেআইনি অনুপ্রবেশকারী মহিলার বয়ান সঠিক হলে তা মুম্বাই পুলিশের কাছে তথ্য থাকবে। তবে চিঠি পাঠানো হলেও এখনও পর্যন্ত মুম্বাই পুলিশের কাছ থেকে জবাব না আসায় তার বয়ানকে কেন্দ্র করে ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও ধৃত মহিলার বয়ান মোতাবেক সোদপুরে তার আত্মিয় অর্থাৎ এক দিদির সন্ধান মিলেছে। পুলিশকে শাইস্তা জানিয়েছে তার সোদপুরে তার দিদি রয়েছে। সেমত পুলিশ ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। পাক ধৃতকে নিজের বোন বলেই ফোনে পুলিশকে জানিয়েছে ওই মহিলা। জেরায় তলব করা হয়েছে সোদপুর নিবাসী মহিলাকে। পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রের খবর ধৃত পাকিস্তানি মহিলা পুলিশকে জানিয়েছে সীমা হায়দার কাণ্ডের খুঁটিনাটি টিভি ও ইন্টারনেট মাধ্যমে দেখেছেন তিনি। সেখান থেকেই নেপাল হয়ে ভারতে প্রবেশ পথকে অনুকরন করেন তিনি। পাক মহিলার বয়ান সীমা হায়দারের এদেশে বসবাস করছে ফলে এভাবে ভারতের নাগরিকত্ব সহজে মিলবে সে উদ্দেশ্যে নিয়েই কোনভাবে নেপাল থেকে সন্তানকে নিয়ে ভারতের সীমান্তে ঢুকতে মরিয়া হয়ে পড়ে সে। মহিলার কাছে মেলা পাসপোর্টটি ২৯শে মে ২০২২-এ ইস্যু হয়েছে যার মেয়াদ রয়েছে ২৭মে ২০৩২ পর্যন্ত। নাবালকের পাসপোর্ট-এ তার পরিচয় পুত্র সন্তান হিসেবে উল্লেখ্য রয়েছে। নাবালকের পাসপোর্ট ২৯.৫.২০২২ইস্যু করা হয় যার মেয়াদ ২৮.০৫.২০২৭। চলতি মাসের ৫ই নভেম্বরে নেপালের টুরিস্ট ভিসাটি ইস্যু করা হয়েছে।
অন্যদিকে নেপাল ভারত সীমান্ত পানিট্যাঙ্কি চেক পোস্টে ধৃত মহিলার সঙ্গে থাকা দুটি ট্রলিব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে পাকিস্তানের মহিলা এবং ওই নাবালকের দুটি পাসপোর্ট ও নেপালের ট্যুরিস্ট ভিসা হাতে আসে এসএসবির। মহিলা ও তার সঙ্গে থাকা পুত্র সন্তান বলে দাবি করা নাবালকের পাসপোর্ট ও ওই ট্যুরিস্ট ভিসা পুনরায় যাচাইয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পাশাপাশি মহিলার পক্ষের আইনজীবী পূর্বে শুনানির সময়তেই ওই মহিলা শিলচরের নিবাসী বলে দাবি করে। আসাম সরকারের কাছে ওই মহিলার নাগরিকত্বের পূর্বের প্রমাণপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য পুলিশ। যা ধৃতের পক্ষের আইনজীবী পক্ষে পেশ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার ধৃত পাক অনুপ্রবেশকারী মহিলাকে সাতদিনের পুলিশি হেফাজত শেষে পুনরায় শিলিগুড়ি আদালতে পেশ করা হলে আদালত আরও ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।মহিলা আদালতে তার একমাত্র পুত্র সন্তানকে তার সঙ্গে রাখার আবেদন জানান আদালতের কাছে। ধৃতের পক্ষের আইনজীবী সায়ন দস্তিদার বলেন ওই নাবালক দার্জিলিং জুভেনাইলের তত্ত্বাবধানে হোমে রয়েছে। ওই নাবালকের বয়সের সঙ্গে মহিলার বয়সের ব্যবধান স্বাভাবিক মা ও সন্তানের বয়সের ব্যবধানের তুলনায় বেশি যাতে খটকা বাধে পুলিশের। সে বিষয়ে মহিলা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তার দুই দফায় গর্ভপাত হয়েছে। যার জেরে বিবাহের বহু বছর পর এই সন্তানের জন্ম। মহিলার আবেদন জন্মের পর তার সন্তানকে কখনই কাছ ছাড়া করেননি তিনি। মহিলার গ্রেফতারের সময় তে তার হেফাজত থেকে যে দুটি পেনড্রাইভ মিলেছে, পুলিশ সূত্রের খবর তাতেও সেই শিশুর বেড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ের অজস্র ছবি রয়েছে। এদিকে এসটিএফ, সিবিআই, সেনা গোয়েন্দা বিভাগের পাশাপাশি পাক মহিলার মামলায় তদন্ত করতে পারে নিরাপত্তা এজেন্সি এনাআইএ। মহিলা ও শিশুর মাঝের সম্পর্ক প্রমানে আদালতের নির্দেশে প্রয়োজনে করা হতে পারে ডিএনএ টেস্টও।ধৃতের পক্ষের আইনজীবী জানান পরিস্থিতি তেমন হলে শিশুকে মায়ের কাছে ফেরাতে আদালতকে ডিএনএ টেস্টের আবেদন জানাবো। মহিলা স্বামীর অত্যাচারে হাত থেকে রক্ষা পেতেই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে ভারতে ফিরে এসেছে বলে দাবি তার।