দূর্যোগে কবলিত উত্তরবঙ্গ পুনর্গঠনের কাজে কল্পতরু ভূমিকায় ধরা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।উত্তরে ক্ষত সারাইয়ের সঙ্গে উত্তরবাসীর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে গুচ্ছের নতুন প্রকল্পের উপহার মুখ্যমন্ত্রীর।চা বাগানের শিশুদের স্কুলে যাতায়াতে ১০টি বাস। ১৪টি হেলথ সেন্টার।সিকিমের তিস্তার বুকে অপরিকল্পিত হাইড্রো পাওয়ার সামাজিক অপরাধ করছে কেন্দ্র।ফের ভুটান রিভার কমিশন নয় কেন সোচ্চার মুখ্যমন্ত্রী:
শিলিগুড়ি। দূর্যোগে কবলিত উত্তরবঙ্গ পুনর্গঠনের কাজে কল্পতরু ভূমিকায় ধরা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।উত্তরে ক্ষত সারাইয়ের সঙ্গে উত্তরবাসীর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে গুচ্ছের নতুন প্রকল্পের উপহার মুখ্যমন্ত্রীর।সোমবার এক মাসের মাথায় ফের উত্তর সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন শিলিগুড়ির অদূরে মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভ্যারচুয়াল প্রশাসনিক বৈঠক থেকে রাজ্যের ২২টি জেলা সরকারি পাট্টা প্ৰদান সহ সরকারি সুযোগ সুবিধে প্রদান করেন। এরমধ্যেই উত্তরবঙ্গের জন্য কয়েকশো কোটি টাকার প্রকল্পের সুবিধে তুলে দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের ৮ জেলায় ৩৮৯১টি ভূমিহীন পরিবারকে ভিটেমাটি ভূমির অধিকার স্বরূপ পাট্টা প্রদান করেন। তাদের আগামিতে মাথার ছাদ নিশ্চিত করে মিলবে বাংলার বাড়ি। উত্তরবঙ্গ বিধ্বংসী বন্যা ও ভূমিধসের পর রাস্তাঘাট বাড়ি পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে অসহায় পরিবার গুলির ক্ষত সারাইয়ের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বন বস্তি পাট্টা সহ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন।উত্তরকন্যা রাজ্য সচিবালয় থেকে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১১,৫৫৫টি ও পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত ৩,২৩৯টি পরিবারকে বাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য ১৬১.৩৩ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান ব্যয় বরাদ্দ করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী ভ্যারচুয়াল উপস্থিতিতে তুলে দেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির হাতে জেলা ভিত্তক প্রশাসন। নতুন কয়েকশো কোটির প্রকল্পের ঘোষণাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষত উত্তরবঙ্গের আট জেলার জন্য ক্ষত সারানোর পাশাপাশি নাগরিকদের উপহারের ঝাঁপি খুলে দেন। চা বাগান এলাকায় ১৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন ও নতুন ১৪টি ক্রেশ উদ্বোধন হয় ভ্যারচুয়াল মাধ্যমে।মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে জানান- উত্তরবঙ্গ বিধ্বংসী বন্যা ও ভূমিধসের পর এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে। এর জন্য আমি পুনরায় জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল মানুষ যাঁরা এই মহান কর্মকাণ্ডে নিজের জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষের সেবার্থে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন – তাঁদের সকলকে হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রাণহানি, জীবিকা ও সম্পত্তির বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সরেজমিনে দেখার পর আজ আমি ৬ অক্টোবরের পর তৃতীয়বারের জন্য উত্তরবঙ্গে এলাম। আগের সফরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ, উদ্ধার, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কার্যক্রম সরাসরি পরিদর্শন করেছিলাম। ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য ও নিহতদের পরিবারের একজন সদস্যকে হোমগার্ড পদে চাকরি প্রদান করা হয়েছে।আজ উত্তরকন্যা রাজ্য সচিবালয় থেকে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১১,৫৫৫টি ও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩,২৩৯টি পরিবারকে বাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদান করেছি, যার মোট ব্যয় ১৬১.৩৩ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ করেই গ্রামীণ আবাসন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার আগে, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের ১ নম্বর রাজ্য ছিল, যেখানে ৪৫.৭ লক্ষেরও বেশি ঘর নির্মিত হয়েছে। কেন্দ্রের সহায়তা বন্ধ হওয়ার পর রাজ্য সরকার ‘বাংলার বাড়ি’ সকলের জন্য নিয়ে এসেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষ পরিবারকে ১৪,৪০০ কোটি টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে, যাতে তারা নিজেদের ঘর তৈরি করতে পারে। শীঘ্রই আরও ১৬ লক্ষ পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হবে, যাতে গ্রামীণ বাংলার প্রতিটি উপযুক্ত পরিবার নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।সাম্প্রতিক বন্যা ও ধস কবলিত কৃষকদের ফসলের বীজ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রদান করলাম। সরষে, গম, মুসুর, ভুট্টা, খেসারি, আলু ও অন্যান্য ফসলের চাষের জন্য ১,১৬,০০০-এরও বেশি কৃষককে ৬.৫ কোটি টাকার বীজ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০,৭২৪ জন কৃষককে ৩.৫ কোটি টাকার মৌসুমি সবজি যেমন কুমড়ো, ঢেঁড়স, বেগুন, লঙ্কা, শসা, টমেটো, গাজরের বীজ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং জেলায় ১,০৫০ জন কৃষককে কমলালেবু, আদা ও বড় এলাচের চারা গাছ বিতরণ করা হয়েছে, যাতে পাহাড়ি অঞ্চলের উদ্যানপালন আরও শক্তিশালী হয়।
পাশাপাশি, বন্যা ও ধস কবলিত দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার ৮০৭ জন কৃষককে কৃষি জমি পুনরায় চাষযোগ্য করার জন্য ৪৭ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। ফসলহানির মূল্যায়ন শেষ হলে শীঘ্রই বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১.১৩ কোটি কৃষক ৩,৯৩৮ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।আজ উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলার ৩,৪৯১ জন উপভোক্তাকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মোট ৬.৫৬ লক্ষেরও বেশি পাট্টা বিতরণ করা হয়েছে — যার মধ্যে রয়েছে ৩.১৭ লক্ষেরও বেশি গৃহ পাট্টা, ১.৯৩ লক্ষেরও বেশি কৃষি পাট্টা, ৫৯ হাজারেরও বেশি উদ্বাস্তু পাট্টা, ৪৭ হাজারেরও বেশি বনপাট্টা এবং ৩৯ হাজারেরও বেশি চা-বাগান পাট্টা।উত্তরবঙ্গের চা-বাগান অঞ্চলে আমরা মোট ৫৩টি নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করছি, যার মধ্যে আজ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও দার্জিলিংয়ে ১৪টি কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। আমি আজ চা-বাগান শ্রমিকদের শিশুদের জন্য ১৫টি নতুন ক্রেশ উদ্বোধন করেছি। এখন পর্যন্ত মোট ৯৫টি ক্রেশ নির্মিত হয়েছে। শিশুদের নিরাপদে স্কুলে পৌঁছানোর জন্য ১০টি বাস পরিষেবারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ২৪টি চা-বাগান পুনরায় খোলা হয়েছে, যাতে ২২,০০০ শ্রমিক উপকৃত হয়েছেন। এর আগে ৫৯টি চা-বাগান পুনরায় চালু করা হয়েছিল।
চা বাগানের শিশুদের স্কুলে যাতায়াতে ১০টি বাস ও ১৪টি হেলথ সেন্টারের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।মুখ্যমন্ত্রী বলেন আলিপুরদুয়ার জলপাইগুড়ি দার্জিলিং জেলায় চা বলয় ১৪ টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন আজকে আমরা করলাম।মোট ৯৫ টা হচ্ছে, ১৯টা আগে হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য চা এবং নির্মাণ শ্রমিক পরিবারের মা এবং শিশুদের সুবিধার্থে ৯৫টা ক্রেশ করে দিচ্ছি আমরা। এর মধ্যে ১৯ টাকা আগে হয়ে গিয়েছে আরো ১৪ টা আজকে উদ্বোধন করা হলো।চা বাগানে যা সুন্দরী প্রকল্পে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক পরিবারকে চা সুন্দরী প্রকল্পে পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে।
চা বাগান এলাকায় যাতায়াতের সুবিধার্তে চা বাগানের স্কুল পড়ুয়াদের দশটি স্কুল বাস প্রদান করেন এদিন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বলেন- দশটি বাস আমরা দিচ্ছি। কয়েকদিনের মধ্যেই বাস গুলো এসে যাবে। তারা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে স্কুলে যায়,অনেক সময় জন্তু-জানোয়ারের আক্রমণে হয়তো অঘটন ঘটে যায়। সেজন্য তাদের নিরাপত্তার জন্য ভেবে দশটি স্পেশাল বাস তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে। আমি আজকে এনাউন্স করে দিলাম কয়েক দিনের মধ্যেই এটা চালু হয়ে যাবে চা বাগানের বাচ্চাদের জন্য।



