শিলিগুড়ি

বৃদ্ধাশ্রমে মুখোমুখি হয়ে আজ জানতে চায় মা-বাবা কি বেঁচে আছে?এসআইআরে পাশ করতে বৃদ্ধাশ্রমের আঙ্গিনায় কড়া নাড়ছে

খোকার বয়স হয়তো এখনও ঊনষাট হয়নি, তবে এসআইআর প্রক্রিয়ার জটে বৃদ্ধাশ্রমের দরজায় কড়া নাড়ছে নচির গানের সে খোকারা!এসআইআরের পরীক্ষায় পাশ করতে শেকড় ছিড়ে ফেলা বৃদ্ধাশ্রমের আঙিনাতেই পরিত্যাগ করা অভিভাবকের নথি খুঁজতে কড়া নাড়ছে সন্তানসন্ততি থেকে নাতিনাতনী তথাকথিত পরিজনেরা।বৃদ্ধাশ্রমে মুখোমুখি হয়ে আজ খোকারা জানতে চায় মা-বাবা কি বেঁচে আছে?

শিলিগুড়ি। খোকার বয়স হয়তো এখনও ঊনষাট হয়নি, তবে এসআইআর প্রক্রিয়ার জটে বৃদ্ধাশ্রমের দরজায় কড়া নাড়ছে নচির গানের সে খোকারা! বৃদ্ধাশ্রমে মুখোমুখি হয়ে আজ খোকারা জানতে চায় মা-বাবা কি বেঁচে আছে?”মুখোমুখি আমি খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম”- নচিকেতার গানের বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক বৃদ্ধ বাবার সে স্বপ্ন পূর্নতা পেয়েছে ঠিক, তবে কোনো বোধদয় নয়!এসআইআরের পরীক্ষায় পাশ করতে শেকড় ছিড়ে ফেলা বৃদ্ধাশ্রমের আঙিনাতেই পরিত্যাগ করা অভিভাবকের নথি খুঁজতে কড়া নাড়ছে সন্তানসন্ততি থেকে নাতিনাতনী তথা কথিত পরিজনেরা। নাগরিকত্বের প্রমান দিতেই বাবা মায়ের খোঁজ। একদিন নিজ হাতে সাজানো সংসারে হয়ে উঠেছিলেন অবাঞ্ছিত, তিলে তিলে বড় করে তোলা ছেলে মেয়েদের কাছে আর পাঁচটা জড় বস্তুর মত অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ায় তাদের ঠিকানা হয়েছিল অন্য এক অপরিচিত আস্তানায়। প্রবীণ অভিভাবকদের পরিত্যাগ করেছিল পরিবার আর যোগাযোগটুকুও রাখেনি।

কারো বয়স ষাট তখন, কারো সত্তুর-যে বয়সে পরিজনেদের উষ্ণ হাতের স্পর্শ ভুলিয়ে দিতে পারে ক্ষনিকের জন্য শারীরিক অক্ষমতাকে সে বয়সে নিজ ঘর সংসারের শেখড় ছিন্নমূল করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একদিন চলে গিয়েছিল সন্তান পরিজনেরা। ঘরের পুরোনো আসবাবপত্রের মতোই কার্যত পরিত্যাগ করেছে বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিক প্রবীনদের যারা ছিল তাদের পরিবার-পরিজন। কিছু না বলেই মুখ ফিরিয়ে গাড়ির ধোঁয়া ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল,ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যে আশ্বাস ছিল প্রবীন হৃদয়ে। কিন্তু শত চোখের জল ফিরিয়ে আনতে পারেনি আপনজনকে। এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই নিজ স্বার্থ আর প্রক্রিয়ার জটে শিলিগুড়ি কাওয়াখালির বৃদ্ধাশ্রমে ফিরছে গাড়ি, অনবরত বেজে চলছে বৃদ্ধাশ্রমের অফিস ঘরে থাকা ল্যান্ড লাইন। রিসিভার তুলতেই প্রশ্ন অমুক সাল এরপরই নাম আর সরাসরি জিজ্ঞাসা তাদের ভোটার কার্ড, এপিক নম্বর, নথি চাই- কয়েকদিন ধরে এসব চলছে কিছুটা আক্ষেপে ভরা ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি নিয়ে বলেন বৃদ্ধাশ্রম আপনা ঘরের অফিস কর্মী। বৃদ্ধাশ্রমের তরফে বোর্ড সদস্যরা জানান আসলে তাদের বাড়ির সদস্যটি জীবিত না মৃত সে সংবাদটুকুও মূল্যহীন তাই বছরের পর বছর পেড়িয়ে গেলেও আবাসিকদের খোঁজখবর রাখেনা, কোনোরকম যোগাযোগ করেনা পরিবার। এসআইআর হওয়ার পর থেকে ফোন আসছে, বৃদ্ধাশ্রমের চৌকাঠে এসে হাজির সেই সন্তানেরা, কারো আবার এক প্রজন্ম পেড়িয়ে নাতি নাতনীরা এসে নথি জন্য তদারকি করছে। বয়স পঁচাত্তরের প্রবীনা মায়া কুন্ডু-র একদিন নৌকাঘাটে ছিল ঘর-সংসার, সে সবের হাত বদল হয়েছে। গত ছয় বছর ধরে বৃদ্ধাশ্রমের ৯নম্বর ঘরটি তার আস্তানা। তিনি বলেন কেউ আসেনি,ভোটার কার্ড নথি আমার কাছে নেই এখানেই জমা রয়েছে অফিসে। শুনেছি ছেলে ফোন করেছে, ছেলে বলেছে নাগরিক প্রমানে মায়ের পরিচয়ে নথি লাগবে। তারা নথি নিতে আসবে আমার ছবিও নাকি তুলবে। পরিবার ঘর ছাড়া করা ছেলের প্রতি অভিমান থেকে থাকলেও মায়ের মন তাই মায়া দেবীর কথায় এত বছর অপেক্ষা করে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম, তবে ছেলে নাতি নাতনিকে এতদিনে একটিবার দেখতে পাবো সেটাই বা কম কিসের। আবার সুরবালা দেবী বলেন তিন মাস আগে ছেলে রেখে বলেছে তুমি এখানেই থাকো, কিছুইতো বুঝিনি তখন। বাড়িতে ছেলে ও নাতি নাতনীরা আছে তাই ওদের জন্য খুব মন খারাপ করে, তার কথায় ছেলে আমায় বাড়ি ছাড়া করেছে কিন্তু আমি যদি ওর কোনো প্রয়োজন মেটাতে পারি মা হয়ে অবশ্যই সাহায্য করবো। ফাঁসীদেওয়ায় তার বাড়ি পরিবার রয়েছে।বর্তমানে এই বৃদ্ধাশ্রমে ৭০জন আবাসিক রয়েছে। রবিবার বাগডোগড়ার বাসিন্দা এক তরতাজা বয়স ৩২এর যুবক মোটরবাইকে এসে হন্তদন্ত হয়ে প্রশ্ন বাবা বেঁচে আছে? সরাসরি জিজ্ঞাসা করায় বলেন আমার বাবাকে ১৩বছর আগে রেখে গিয়েছিলাম।বাবার কথা আর কিছু জানিনা।এখানে আর কোনোদিনও আসিনি। এখন সার হচ্ছে তাই বাবার ভোটার কার্ড, নথি সেসব প্রয়োজন বলছে- কি করবো বলুন তো! তাই তড়িঘড়ি এসেছি। যা শুনে চোখের কোনের গড়িয়ে আসা অশ্রুজল মুছে প্রবীন আবাসিকেরা ক্লান্ত মুখে ফিরে যেতে লাগান নিজ নিজ ঘরে।বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের তরফে চেয়ারম্যান ওম প্রকাশ আগরওয়াল বলেন- যারা আপনজনকে ছেড়ে গিয়েছে আর কোনোদিন তাদের খোঁজ নেয়নি।

জগৎ সংসারে তাদের কেউ নেই বলেই মেনে নিয়েছে প্রবীনেরা।কেউ দশ বছর বারো বছর ধরে রয়েছে। তাদের নথি যাচাইয়ের ছুটে আসছে নাতি নাতনীরা এটা কালের চক্র বলা যেতে পারে। তবে যেহেতু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যতটা পারবো তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তবে শুধুমাত্র একদিন দুদিনের জন্য ছবি তুলতে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি আমরা দিচ্ছি না। কারণ এই প্রবীণ মানুষগুলোর অনেকটা সময় লেগে যায় পরিবার পরিজনেদের প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে।অপরদিকে এসআইআর প্রসঙ্গে তিনি জানান অধিকাংশের ভোটার কার্ড নথি হিসেবে আমাদের কাছে আছে। এরা প্রবীণ মানুষ তাদের সকলের নাগরিকত্ব নিয়ে যাতে কোনোরকম সমস্যা না থাকে সেজন্য আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবো। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন তথা জেলা নির্বাচনী দপ্তরের তরফে বক্তব্য- বৃদ্ধাশ্রম ও আবাসিকদের নথি আমাদের কাছে রয়েছে।যেভাবে নির্দেশিকা আসবে সেমত কাজ হবে।জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে
বিগত বছরও রাজগঞ্জ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের দপ্তর তথা ব্লক স্তরে নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা আবাসিকদের নাম ও তথ্য সংগ্রহ করেন। সমস্তটা প্রক্রিয়ায় মধ্যে আছে।