নতুন বছরেই হতে চলেছে প্রতীক্ষার অবসান! উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারি পার্কে জানুয়ারি মাসেই আগমন হবে বনের রাজা রানী দ্বয় পশুরাজ সিংহের।চলতি আর্থিক বর্ষে আয়ের নয়া রেকর্ড গড়ার দোড়গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প সাফারী পার্ক। আর্থিক বর্ষ শেষের আগেই আয়ের অংক ছুঁয়েছে ৫কোটিতে। দ্রুত পুরনো রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড আয়ের আশায় সাফারী কর্তৃপক্ষ।
শিলিগুড়ি।নতুন বছরের শুরুতেই হতে চলেছে প্রতীক্ষার অবসান! উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারি পার্কে জানুয়ারি মাসেই আগমন হবে বনের রাজা রানী দ্বয় পশুরাজ সিংহের।চলতি আর্থিক বর্ষে আয়ের নয়া রেকর্ড গড়ার দোড়গোড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প সাফারী পার্ক। আর্থিক বর্ষ শেষের আগেই আয়ের অংক ছুঁয়েছে ৫কোটিতে। দ্রুত পুরনো রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড আয়ের আশায় সাফারী কর্তৃপক্ষ।
আর নতুন বছর থেকেই সম্ভবত উত্তরবঙ্গে প্ৰথম সিংহ সাফারির সুযোগ মিলতে চলেছে পর্যটকদের। ইংরেজি নতুন বছরে পর্যটকদের জন্য গুচ্ছের উপহার নিয়ে হাজির বেঙ্গল সাফারী পার্ক। জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ ত্রিপুরা সিপাহীজলা চিড়িয়াখানা থেকে স্ত্রী ও পুরুষ এক জোড়া সিংহ আনা হবে সাফারিতে। ইতিমধ্যেই তার জোড় প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ নিরাপত্তায় এসকর্ট কনভয়ে লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সে ত্রিপুরা সিপাহীজলা চিড়িয়াখানা থেকে নিয়ে আসা হবে সিংহ জুটিকে। জানুয়ারির শেষ অথবা ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই লায়ন সাফারীর আনন্দ নিতে পারবেন পর্যটকেরা। একইসঙ্গে নতুন বছরে পর্যটকদের সঙ্গে সাফারীতে সাক্ষাৎ ঘটে যেতে পারে তিন মাস বয়সী রয়্যাল বেঙ্গল চার ব্যাঘ্র শাবক ও দুই হিমাল্যয়ান ব্যাল্ক বিয়ারের।সাফারির রয়্যাল বেঙ্গল পরিবারে বাঘিনী দ্বয় কিকা ও রিকার চার ব্রাঘ্র শাবককে সাফারিতে দ্রুত পর্যটকদের সামনে আনা হবে। একইসঙ্গে হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের দুটি শাবককে পর্যটকদের জন্য এনক্লোজারের বাইরে উন্মুক্ত বনাঞ্চল সাফারীতে ছাড়া হবে।রবিবার শিলিগুড়ি শালুগাড়া উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারি পার্কে সংবাদমাধ্যমের সম্মুখে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত বনমন্ত্রী বীর বাহা হাঁসদা ও পশ্চিমবঙ্গ জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি তথা বন দপ্তরের অ্যাডিশনাল প্রিন্সিপাল চিফ কনজারভেটর সৌরভ চৌধুরী জানান জানুয়ারি মাসেই ত্রিপুরার সিপাহীজলা জুলজিক্যাল পার্ক থেকে সিংহ দ্বয়ের জুটিকে আনা হবে সাফারিতে। দীর্ঘদিন ধরে সেন্ট্রাল জুয়েল অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে ছিল বেঙ্গল সাফারিতে সিংহ আনয়নের প্রক্রিয়া। তবে এদিন বনমন্ত্ৰীর উপস্থিতিতে জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরী বলেন- ইতিমধ্যেই রাজ্য বনদপ্তরের কাছে সেন্ট্রাল জুয়ের অনুমোদন চলে এসেছে। জানুয়ারির ৭ তারিখ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত একটা লম্বা সময় ত্রিপুরা থেকে সাফারিতে এই বন্যপ্রাণ আনয়ন প্রক্রিয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু একাধিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বন্যপ্রাণ স্থানান্তরিত করতে হয়। একই সঙ্গে বন্যপ্রাণীদের শারীরিক অবস্থার খুঁটিনাটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে স্থানান্তর প্রক্রিয়া তাই জানুয়ারি মাসের এই লম্বা সময়টা রাখা হয়েছে। তিনি জানান জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা আশা করছি বেঙ্গল সাফারিতে সিংহ দুটি এসে পৌছবে। নতুন পরিবেশে তাদের মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে তাই কিছুদিন নাইট শেল্টারে আইসোলেশনে রাখার পর সাফারির উন্মুক্ত বনাঞ্চলে ছাড়া হবে তাদের। ফলে জানুয়ারি মাসে সিংহ জুটির সাফারিতে আগমন ও নির্ধারিত আইসোলেশনের পর্ব শেষ করে নতুন বছরে উত্তরের বুকে লায়ন সাফারির আনন্দ চুটিয়ে উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকেরা। রাজ্য জুয়ের মেম্বার সেক্রেটারি বলেন সিপাইজলা জুওলজিক্যাল পার্কের ছোট পরিসরে দিন যাপনে অভ্যস্ত এই সিংহ দ্বয়। তাই সাফারির ৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিশাল উন্মুক্ত এনক্লোজারে ছেড়ে দেওয়ার আগে তাদের মানিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ কিছুটা সময় দিতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছুদিন তাদের উন্মুক্ত বনাঞ্চলে সাফারিতে ছেড়ে পর্যবেক্ষণের পর পাকাপাকিভাবে পর্যটকদের সাফারীর সুযোগ মিলবে। একইসঙ্গে রয়্যাল পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ তিন ও চার মাস বয়সী চারটি শাবককেও পরীক্ষামূলকভাবে সাফারির উন্মুক্ত বনাঞ্চলে ট্রায়াল রান করানো হবে। পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ সফল হলে নতুন বছরে জানুয়ারি মাসে পর্যটকদের রয়্যাল বেঙ্গল পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে সাফারিতে সাক্ষাৎ হতে চলেছে। এর পাশাপাশি নজিরবিহীন ভাবে সাফারির বনভূমিতে সফল প্রজনন হয় হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ার শাবকের। ছয় মাস সম্পন্ন হওয়া হিমালয়ান ব্ল্যাকবেরিয়ার ছানার দর্শনও মিলবে পর্যটকদের। এই বিষয়ে মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরী বলেন আসলে রয়্যাল বেঙ্গল এবং হিমালয়ান ব্ল্যাক শাবকেরা খুদে বন্যপ্রাণীদের সহজাত স্বভাববশত উন্মুক্ত বরাঞ্চলে ছাড়া হলে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করবে। ফলে সাফারীর চলন্ত বাসের মুখোমুখি আচমকা চলে এলে বিপদ ঘটতে পারে। তাই আগে বেশ কিছু দিন ট্রায়াল রানের মাধ্যমে গাড়ির আভাস বুঝে নিজে থেকে কতটা সতর্ক হয়ে উঠছে তারা তা পর্যবেক্ষণ করেই সাফারি জন্য তাদের এনক্লোজারের বাইরে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আগামী ১৫-২০দিনের মধ্যেই তাদের সাফারিতে পর্যটকদের জন্য ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।সবমিলিয়ে সাফারিতে বিরল প্রজাতির শিডিউল এক রয়্যাল বেঙ্গল বাঘের সংখ্যা ১১। বর্ধমান চিড়িয়াখানা থেকে একটি চিতা কৃষ্ণাকে নিয়ে আসা হয়েছে যা সাফারিতে সাত দিনের চিকিৎসা পর্ব শেষে ছাড়া হবে। বাঘের পাশাপাশি সাফারী পার্কে এদিন রাজ্যের বনমন্ত্রীর বীর বাহা হাঁসদা ওয়েস্টার্ন হুলক গিভনের এনক্লোজারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সাফারি কর্তৃপক্ষে তরফে জানানো হয়েছে আগামী সাতদিন নাইট শেল্টার গিভন দ্বয়কে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখার পর পর্যটকদের সামনে আনা হবে। এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রাণী। যা সংরক্ষিত শিডিউল এক প্রজাতির আওতাভুক্ত। বিশেষ করে এই প্রানি শিশুদের চোখে আরও বেশি আকর্ষণীয়। এছাড়া সাফারীর নির্দিষ্ট অ্যাডভেঞ্চার পার্ক এলাকায় এদিন ই-সাইকেলিং চালু করা হয়।
পাশাপাশি নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টারটিকে আরো আধুনিক পরিকাঠামোয় সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের অর্থ সংস্থানের ওপর ভর করে চলছে জু অথোরিটির অনুমোদিত জাতীয় স্তরের এই বেঙ্গল সাফারি পার্ক। দেশের পর্যটন মানচিত্রে পাকাপাকি স্থান করে নিয়েছে সাফারী পার্ক। চলতি আর্থিক বর্ষে সাফারি পার্ক আয়ের নয়া রেকর্ড গড়ার পথ ধরে এগিয়ে চলছে। রাজ্য জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরী জানান- গত আর্থিক বর্ষে বেঙ্গল সাফারিতে আয়ের অংক ছিল ৫ কোটি ৬৭লক্ষ টাকা। এবারে চলতি আর্থিক বর্ষে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আই এর অংক পৌঁছেছে পাঁচ কোটির ঘরে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান আর্থিক বর্ষ মার্চ মাস শেষের আগেই বিগত বছরের আয়ের রেকর্ড ভেঙে নয়া মাইলস্টোন গড়বে সাফারি পার্ক। তিনি জানান সেক্ষেত্রে এই আয়ের অংকের সঙ্গে পর্যটকদের টিকিট মূল্যের পাশাপাশি সংযুক্ত রয়েছে সাফরের ভেতরে বিভিন্ন সামগ্রিক সুভেনিয়র শপ ও ক্যান্টিন ভাড়া। ফলত এই আয়ের অংক ৭ কোটির ঘরে পৌছবে সে টার্গেট নিয়েই এগোচ্ছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখযোগ্যভাবে এরমধ্যে বিভিন্ন স্কুল কলেজের পড়ুয়াদের বড় সংখ্যা রয়েছে। গত মাসে শুধুমাত্র স্কুল কলেজগুলি থেকেই ছয় হাজারের বেশি পড়ুয়ারা এসেছেন। রাজ্যে সবগুলি জুয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ মুলক বিষয়ের ওপর নজর আরোপ করে নেচার ইন্টারপ্রিটিশন সেন্টারে বস্তুতন্ত্রে নমুনা বৃদ্ধি ও আধুনিক পরিকাঠামো বিকাশে নজর দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে সাফারীও।