গ্রীন করিডরে বাংলা থেকে ভিন রাজ্য ত্রিপুরায় পাড়ি জোড়া রয়্যাল বেঙ্গলের। শিলিগুড়ি শালুগাড়ার উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারি থেকে রয়্যাল বেঙ্গল সহ দুটি চিতা ও দুটি ময়ূর সহ ১৪টি বিশেষ আকর্ষনীয় পাখি প্রাণী বিনিময় প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে সাফারী পার্ক থেকে ত্রিপুরার সিপাহিজলা চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে। বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে গ্রীন করিডরের মাধ্যমে বেঙ্গল সাফারী থেকে লাইফ সাপোর্ট এম্বুলেন্স জোড়া পুরুষ ও স্ত্রী রয়্যাল বেঙ্গল জুটি সহ চিতা দ্বয়কে (পুরুষ ও স্ত্রী) নিয়ে রওয়ানা দিয়েছে ত্রিপুরার সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে। দুদিনের বিশ্রামের পরই ত্রিপুরা থেকে আসতে চলেছে সিংহ জুটি সাফারিতে
শিলিগুড়ি।গ্রীন করিডরে বাংলা থেকে ভিন রাজ্য ত্রিপুরায় পাড়ি জোড়া রয়্যাল বেঙ্গলের। শিলিগুড়ি শালুগাড়ার উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান বেঙ্গল সাফারি থেকে রয়্যাল বেঙ্গল সহ দুটি চিতা ও দুটি ময়ূর সমেত ১৪টি বিশেষ আকর্ষনীয় পাখি প্রাণী বিনিময় প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে ত্রিপুরার সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে।
বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনীতে গ্রীন করিডরের মাধ্যমে বেঙ্গল সাফারী থেকে লাইফ সাপোর্ট এম্বুলেন্স জোড়া পুরুষ ও স্ত্রী রয়্যাল বেঙ্গল জুটি সহ চিতা দ্বয়কে (পুরুষ ও স্ত্রী) নিয়ে রওয়ানা দিয়েছে ত্রিপুরার সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি শহরে রাতের নির্জন নিরিবিলি সময় নির্ধারন করে ৮টা নাগাদ সাফারী থেকে গ্রীন করিডরে এসকর্ট সহ বন্যপ্রাণীদের নিয়ে কনভয় বেড়িয়ে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান সাফারী পার্ক চালুর পর ৯ বছরে এই প্রথমবার টাইগার এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় গিয়ে রয়্যাল বেঙ্গল জুটিকে পাঠানো হলো ভিন রাজ্যে। বিরল প্রজাতির শিডিউল একের অন্তর্ভুক্ত রয়্যাল বেঙ্গল বাঘের সফল প্রজননে দেশের বন্যপ্রাণ মানচিত্রে ছাপ ফেলেছে সাফারী পার্ক। বর্তমানে শিলা ও তার সন্তান সন্ততি এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের রয়্যাল বেঙ্গল খুদেদের নিয়ে সব মিলিয়ে সাফারির ভরা সংসারে বাঘেদের সংখ্যা ১১। এর মধ্যে তৃতীয় বার মাতৃত্বের স্বাদ নিয়ে বেঙ্গল সাফারীর বন ভূমিতে পাঁচটি রয়্যাল ব্যাঘ্র শাবকের জন্ম দেয় সাফারির রয়্যাল বাঘিনি শিলা। মৃত্যুও হয় এক ব্যাঘ্র শাবকের। প্রায় দু বছর বয়সী একসঙ্গে জন্ম নেওয়া সে বাঘেদের মধ্যে থেকেই বিশেষ সখ্যতা নজরে আসা পুরুষ ও স্ত্রী একজোড়া রয়্যাল বেঙ্গল সাফারির অরণ্যভূমিকে আলবিদা জানিয়ে যাচ্ছে নতুন ঠিকানা ভিন রাজ্য ত্রিপুরার সিপাইজলা চিড়িয়াখানায়।একইসঙ্গে এয়ারকন্ডিশনার লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সে সাফারী থেকে ত্রিপুরার চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে দুটি চিতা,দুটি ময়ূর, চারটি হিল ময়না, চারটি বিদেশি প্রজাতীর ফেজেন্ট বা মথুরা পাখি ও চারটি গোল্ডেন ফেজেন্ট পাখি। সেন্ট্রাল জু অথোরিটির গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যানিমেল এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে এর বিনিময়ে বেঙ্গল সাফারিতে আসতে চলেছে পুরুষ ও স্ত্রী সিংহ জুটি সঙ্গে ব্যাল্ক বাক অর্থাৎ কৃষ্ণসার হরিণ,লেপার্ড ক্যাট, ও ত্রিপুরার জাতীয় প্রাণী স্পেক্ট্যকেল লঙ্গুর অর্থাৎ চশমা বানর। রাজ্য জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি সৌরভ চৌধুরী জানান রাজ্যের সিডব্লিউএলের অনুমোদন ও সেন্ট্রাল জু অথোরিটির অনুমতি মিলেছে।দুটি অনুমোদনপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে ত্রিপুরার টিমকে। বৃহস্পতিবার রাতে শহর কিছুটা নিরিবিলি হতেই বন্যপ্রাণীদের নিয়ে সাফারী থেকে ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে টিম। ত্রিপুরা সিপাইজলা চিড়িয়াখানার টিমের সঙ্গে সাফারির বন্যপ্রান চিকিৎসক অর্থাৎ ভেটারেন ও অ্যাসিস্টেন্ট ভেটারেন রয়েছেন। এছাড়া ডিরেক্টর ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর পুরো স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ওপর নজরদারি রাখছে। তিনি জানান কিছুদিন আগে থেকেই হাতে সময় নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত রুট ম্যাপ তৈরি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।গোটা যাত্রা পথ জুড়ে গ্রীন করিডর করে বন্যপ্রাণীদের নিয়ে কনভয় পৌছবে নির্দিষ্ট ঠিকানায়।রাজ্য জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি জানান বাংলা সহ আসাম এবং ত্রিপুরা তিন রাজ্যের যেসব জেলা গুলির ওপর দিয়ে যাবে বন্যপ্রাণীর কনভয় সে সমস্ত জেলার জেলা শাসক এবং পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে গ্রীন করিডর ধরে নিরাপত্তা বেষ্টনী মজবুদ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।জানা গিয়েছে তিনটি গাড়ির কনভয় রয়েছে। কনভয়ের সামনে থাকছে পুলিশ এসকর্ট মাঝে অত্যাধুনিক শীততাপ নিয়ন্ত্রিত লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে বন্যপ্রাণীরা তার পেছনে একটি ফাঁকা ট্রলার আছে। সেখানে একটা অংশে কিছু পাখি রয়েছে তবে ৯০শতাংশ ফাঁকা।
রাজ্য বন দপ্তরের পরিকল্পনা অনুযায়ি এর ফলে যাত্রা পথে কোনভাবে ব্রেক ডাউনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত ক্রেনের সাহায্যে অ্যাম্বুলেন্স থেকে বন্যপ্রাণীদের ট্রলারের স্থানান্তরিত করা যাবে। এছাড়া এই রাজ্য বন দপ্তরের অত্যাধুনিক এয়ারকন্ডিশনার অ্যাম্বুলেন্সে বন্যপ্রাণীদের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা নির্ধারন করা রয়েছে, কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকছে এবং অ্যাম্বুলেন্স -এর ভেতরেই আছে বন্যপ্রাণ চিকিৎসকেরা। জিপিআরএস ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে রাজ্য বনদপ্তর নজরদারি রাখবে। জিপিআরএসের মাধ্যমে যাত্রাপথ জুড়ে সমস্ত বন বিভাগকে এলার্ট করা হবে। এছাড়া রাজ্য জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি জানান অ্যানিমেল এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় এই বন্যপ্রাণীর পরিবর্তে সিংহ ও সিংহী জুটি, ভালো লেপার্ড ক্যাট, চশমা বানর, বিরল কৃষ্ণসার হরিণ আসবে সাফারিতে। রাজ্য বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে গ্রীন করিডরে এই টিম বন্যপ্রাণীদের নিয়ে ত্রিপুরার সেপাইজলা চিড়িয়াখানায় পৌঁছতে প্রায় তিন দিন সময় নেবে। সেখানে দুদিন বিশ্রামের পর ফের ত্রিপুরার চিড়িয়াখানা থেকে বন্য প্রাণীদের নিয়ে একইভাবে সাফারীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে। ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা থেকে বন্যপ্রাণীদের নিয়ে সাফারিতে আনয়নের জন্য চিঠিপত্রের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সবুজ সংকেত মিললেই উত্তরবঙ্গে সিংহ জুটি এসে পৌঁছবে। তবে পর্যটকদের সিংহদ্বয়ের দেখা মিলতে অপেক্ষা করতে হবে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। রাজ্য জু অথোরিটির মেম্বার সেক্রেটারি জানান যেহেতু সিপাহীজলা চিড়িখানায় এনক্লোজারে বন্দি অবস্থায় ছিল এই সিংহ দুটি তাই একমাস কোয়ারেন্টাইনে রাখার পর সাফারির উন্মুক্ত বনাঞ্চলে খাপ খাওয়াতে আরো অতিরিক্ত এক মাস বনকর্মীদের বিশেষ নজরদারিতে ট্রায়াল রান চলবে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস পেড়িয়ে এপ্রিল নাগাদ পর্যটকদের সামনে আনা হতে পারে সিংহদ্বয়কে।
এদিকে সাফারী সূত্রে খবর গত ২৯শে জানুয়ারি ত্রিপুরার চিড়িয়াখানা থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টটের তথা বন্যপ্রাণ চিকিৎসকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম সাফারিতে এসে পৌছায়। টানা দুদিন এই টিম রয়্যাল বাঘের ডায়েট চার্ট ধরে খানাপিনা, প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট থেকে দেখভালের প্রশিক্ষণ রপ্ত করে সাফারির বন কর্মী ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। দীর্ঘ যাত্রা পথের জন্য রয়্যাল বেঙ্গল সহ বন্যপ্রাণীদের প্রস্তুত করতে সাফারি বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা খাবারের ডায়েট চার্টে বদল আনে।খাবারের পরিমাণ কমিয়ে সাপ্লিমেন্ট প্রদান করা হয়। এরপর ক্যাপচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভিন রাজ্যে সফর নির্ধারন করা হয়েছে।