🔺🔺বাংলার রয়্যাল বেঙ্গলের এবারে পাড়ি ভিন রাজ্যে! রয়্যাল বেঙ্গল ব্যাঘ্র প্রজননে বেঙ্গল সাফারী মুকুটে ব্যাপক সফলতার পালক সংযোজিত হয়েছে, আর এবারে তাই ৯ বছরে প্রথম টাইগার এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে সাফারী।বেঙ্গল সাফারির আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা রয়্যাল বেঙ্গল জুটি নতুন ঠিকানায় নিজেদের ঘর বাঁধতে চলেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই অ্যানিম্যাল এক্সচেঞ্জ প্রথায় দুটি রয়্যাল বেঙ্গল,দুটি চিতা, ময়ূর সহ বিদেশি পাখি যাবে ত্রিপুরায়, ত্রিপুরা চিড়িয়াখানা থেকে আসবে সিংহ সহ বিশেষ বানর ও কৃষ্ণসার হরিণ
শিলিগুড়ি। বাংলার রয়্যাল বেঙ্গলের এবারে পাড়ি ভিন রাজ্যে! রয়্যাল বেঙ্গল ব্যাঘ্র প্রজননে বেঙ্গল সাফারী মুকুটে ব্যাপক সফলতার পালক সংযোজিত হয়েছে, আর এবারে তাই ৯ বছরে প্রথম টাইগার এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে সাফারী।বেঙ্গল সাফারির আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা রয়্যাল বেঙ্গল জুটি নতুন ঠিকানায় নিজেদের ঘর বাঁধতে চলেছে। তৃতীয় বার মাতৃত্বের স্বাদ নিয়ে বেঙ্গল সাফারীর বন ভূমিতে পাঁচটি রয়্যাল ব্যাঘ্র শাবকের জন্ম দেয় সাফারির রয়্যাল বাঘিনি শিলা। মৃত্যুও হয় এক ব্যাঘ্র শাবকের। প্রায় দু বছর বয়সী একসঙ্গে জন্ম নেওয়া সে বাঘেদের মধ্যে থেকেই পুরুষ ও স্ত্রী একজোড়া রয়্যাল বেঙ্গল সাফারির অরণ্যভূমি ছেড়ে পাড়ি দিতে চলেছে এবারে ভিন রাজ্য ত্রিপুরার সিপাইজলা চিড়িয়াখানায়। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহেই সাফারির বনভূমি ছেড়ে ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে পুরুষ ও স্ত্রী এক জোড়া রয়্যাল বেঙ্গল সহ দুটি চিতা বাঘ (পুরুষ ও স্ত্রী), ময়ূর সহ বেশ কয়েকটি বিদেশি পাখি।
বর্তমানে শিলা ও তার সন্তান সন্ততি এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের রয়্যাল বেঙ্গল খুদেদের নিয়ে সব মিলিয়ে সাফারির ভরা সংসারে বাঘেদের সংখ্যা ১১।যা শিলিগুড়ি শালুগাড়ার কাছে উত্তরবঙ্গ বন্যপ্রাণ উদ্যান সাফারী পার্কের উন্মুক্ত বনাঞ্চলে সফল প্রজননের মধ্য দিয়ে শিডিউল এক প্রজাতীর রয়্যাল বাঘেদের এই সংখ্যা দেশের বন্যপ্রাণ মানচিত্রে ছাপ ফেলেছে। আর এরপরই সাফারী পার্ক প্রতিষ্ঠার ৯ বছরের ইতিহাসে প্রথম বার টাইগার এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাফারী কর্তৃপক্ষ। বন্যপ্রাণী আনয়নের ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল জু অথোরিটির গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যানিম্যাল এক্সচেঞ্জ প্রক্রিয়ায় যেতে হয় চিড়িয়াখানাগুলিকে।বন্যপ্রাণী বিনিময় প্রথার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া চলে। সেমত শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারিতে ভিন রাজ্য ত্রিপুরা সিপাইজলা চিড়িয়াখান থেকে আসতে চলেছে পুরুষ ও স্ত্রী জোড়া সিংহ। একই সঙ্গে ত্রিপুরার জাতীয় প্রাণী স্পেক্ট্যাকেল লাঙ্গুর অর্থাৎ চশমা বানর আসছে। মূলত তাদের চোখের অংশে চশমা পরিহিত চিহ্ন লক্ষ্য করা যায় বলে এই বিশেষ প্রজাতির বানর এই নামেই পরিচিত। তার বিনিময়ে সাফারির বনভূমিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা দুটি পুরুষ ও স্ত্রী রয়্যাল বেঙ্গল এক জোড়া চিতা ও ময়ূর সহ কিছু বিদেশি পাখি সাফারি থেকে যাচ্ছে ত্রিপুরা সিপাইজলায় বলে জানান সাফারীর ডিরেক্টর কমল সরকার। সাফারি সূত্রে জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই দুই রয়্যাল বাঘ দ্বয়ের ডায়েট চার্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট চিড়িয়াখানায়।বছর খানেক আগে দু বছর বয়সী দুটি বাঘের সাফারীর তরফে নামকরণ করা হলেও তাতে অরণ্য ভবন এবং সেন্ট্রাল জু অথোরিটির শীলমোহর পড়েনি। ত্রিপুরা যাত্রার আগে সাফারিতে এই জোড়া রয়্যাল বেঙ্গলকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। সাফারীর তরফে খবর ওই দুই ব্যাঘ্র দ্বয়ের মাঝে সখ্যতা নজরে আসে পার্ক কর্তৃপক্ষের। তাই অন্য চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরের আলোচনার সময়কালেই এই জুটিকে বাছাই করা হয়।এক দফায় ত্রিপুরার বন আধিকারিকরা এসে দেখেও গিয়েছেন। জানুয়ারি মাসের শেষ থেকেই দীর্ঘ এই পথে যাত্রার জন্য ডায়েট চার্টে পরিবর্তন এনে প্রস্তুত করা হবে রয়্যাল বেঙ্গল,চিতা ও পাখিদের। সাফারী সূত্রে জানা গিয়েছে যাত্রার সময় এগিয়ে আসতেই খাবারের পরিমান কমিয়ে বিশেষ সাপ্লিমেন্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেওয়া হবে। লম্বা যাত্রার সময় যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে কারণে সাফারির বন্যপ্রাণ মেডিকেল টিমের তরফে নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট তৈরি করে দেওয়া হবে ত্রিপুরা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে। চলতি মাসের ২৯শে জানুয়ারি ত্রিপুরা সিপাইজলা চিড়িয়াখানার থেকে বন কর্তারা আসতে চলেছেন শিলিগুড়ি সাফারী পার্কে। সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণ চিকিৎসক, জু কিপার সহ ৫ সদস্যের একটি দল আসছে।সমস্ত কিছু ঠিক থাকলে তিনদিনের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ পর্ব সেরে ২রা ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়ি সাফারী পার্ককে আলবিদা জানিয়ে বিশেষ বন্যপ্রাণী পরিবহন গাড়িতে ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে রয়্যাল জুটি সহ চিতা দ্বয় ও ময়ূর,বিদেশি পাখিরা। তবে সাফারী জুড়ে রয়্যাল বিচ্ছেদের মন খারাপের মাঝেই ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহে সিংহ আনয়নের জন্য রওনা দেবে বেঙ্গল সাফারী পার্ক কর্তৃপক্ষের একটি টিম। জানা গিয়েছে ৫ থেকে ৬ সদস্যের এই টিমে থাকবে বন্যপ্রাণ চিকিৎসক, জু কিপার সহ সাফারি ডিরেক্টর ও আধিকারিকেরা।
অন্যদিকে সাফারির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা রয়্যাল বেঙ্গলের আচমকা বিচ্ছেদের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত কারণ-বর্তমানে সাফারিতে ১১টি রয়্যাল বেঙ্গল রয়েছে। তারমধ্যে সবকটি জিনগত ভাবে বাঘিনী শিলার উত্তরসূরী। ফলে বাঘিনী শিলা এবং পরবর্তী রয়্যাল বেঙ্গলের মধ্যে একই জিনগত বৈশিষ্ট্য বিরাজমান। শুধুমাত্র পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল বিভান ভিন্ন জিন বহন করছে। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মত একই জিনগত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাদৃশ্য মেলে। এর মধ্যে বিশেষ করে কোনো রোগ প্রবণতা, বা শরীরে কোনোপ্রকার সংক্রমণ থেকে থাকলে অধিকাংশ সময় পরবর্তী প্রজন্ম জিন তত্ত্ব ধরে তা বহন করে চলে। ফলে আগামিতে সাফারী ব্যাঘ্র প্রজনন কেন্দ্রের পথে এগোনোর ক্ষেত্রে জিন সার্কেল ভাঙা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ডিরেক্টর কমল সরকার বলেন সাফারির রয়্যাল পরিবার এখন অনেক বড়। বেঙ্গল সাফারির পার্কের জন্য এটা খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয়।
তবে ধারাবাহিক প্রজননে দিকে এগোতে হলে একই ব্লাড লাইন চেইন ভাঙাও জরুরী। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মত আবার একই জিন সাদৃশ্য সম্পন্ন বন্যপ্রাণ একে অপরের প্রতি আকর্ষন হারিয়ে ফেলে এতে প্রজননে বাধা আসে। স্বাভাবিকভাবে পরপর শিডিউল এক প্রজাতির রয়্যাল বেঙ্গল ব্যাঘ্র প্রজননে দেশের মধ্যে ছাপ ফেলেছে সাফারী পার্ক। ফলস্বরূপ ব্যাঘ্র প্রজনন কেন্দ্রের পালক যুক্ত করতে তদ্বির করছে রাজ্য বনদপ্তর। সে মত বহু বছর ধরেই সেন্ট্রাল জু অথোরিটির কাছে প্রস্তাব গিয়েছে দফায় দফায়। তবে তা ঝুলছে! জানা যাচ্ছে প্রজনন এই ব্লাড চেইন বা জিন সার্কেলও এক প্রকার বাঁধা, ফলে রাজ্যের অন্য কোনো জু থেকে বহিরাগত রয়্যাল বাঘ আনয়নে তৎপরতার সঙ্গে পরিকল্পনা তৈরি করছে সাফারী কর্তৃপক্ষ।এদিকে পুরুষ ও স্ত্রী সিংহ যুগলের পাশাপাশি বিশেষ বানর ও ব্যাল্ক বাক অর্থাৎ কৃষ্ণসার হরিণ ত্রিপুরার সিপাইজলা চিড়িয়াখানা থেকে সাফারিতে আসছে। ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহে সিংহ বেঙ্গল সাফারিতে এলেও পশুরাজের গর্জন কানে পৌঁছতে পর্যটকদের অপেক্ষা করতে হবে বেশ কয়েকটা দিন। গাইডলাইন অনুযায়ী প্রায় এক মাস সিংহ দ্বয়কে কোয়ারেন্টাইন রেখে যাবতীয় স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বনকর্তাদের নজরদারিতে ট্রায়াল রান সফল হলে সাফারি সিংহ এনক্লোজারে পর্যটকদের সামনে আনা হবে পশুরাজ জুটিকে।