উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজও হাসপাতালের তিন তলা আধুনিক মর্গ ও আধুনিক পরিকাঠামো সম্পন্ন ফরেন্সিক ইউনিটে প্রস্তাব পেশ রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে।এক ছাতার তলায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দেহ সংরক্ষণের আধুনিক পরিকাঠামো সম্পন্ন মর্গ, অত্যাধুনিক ক্লাসরুম, ফরেন্সিক ল্যাবেটরির প্রস্তাব গিয়ে পৌঁছেছে উপর মহলে। চিকিৎসা ক্ষেত্রের গবেষণা থেকে শক্ত হবে আইন রক্ষকদের হাত!
শিলিগুড়ি। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজও হাসপাতালের তিন তলা আধুনিক মর্গ ও আধুনিক পরিকাঠামো সম্পন্ন ফরেন্সিক ইউনিটে প্রস্তাব পেশ রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে।এক ছাতার তলায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দেহ সংরক্ষণের আধুনিক পরিকাঠামো সম্পন্ন মর্গ, অত্যাধুনিক ক্লাসরুম, ফরেন্সিক ল্যাবেটরির প্রস্তাব গিয়ে পৌঁছেছে উপর মহলে। আধুনিক ফরেন্সিক ল্যাবের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে শুধুমাত্র যে দেহ সংরক্ষনের সু বন্দোবস্ত মিলবে তা নয়,চিকিৎসা ক্ষেত্রের গবেষণা থেকে শক্ত হবে আইন রক্ষকদের হাত। একাধিক জটিল অপরাধজনিত মামলার পুলিশি তদন্তের গতি ত্বরান্বিত হবে। খুন, পরোক্ষ ভাবে খুনে সহায়তা, নির্যাতন, ধর্ষণ সহ ভয়ঙ্কর জটিল অপরাধের তদন্ত অগ্রসর হবে। উত্তরবঙ্গের একাধিক অপরাধ জনিত মামলায় অপরাধীকে চিহ্নিতকরন থেকে চটজলদি তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট পেশের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি ঘটবে। বহুদিন ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি অত্যাধুনিক পরিকাঠামো সম্পন্ন ফরেন্সিক ইউনিটের দাবি রয়েছে। চিকিৎসা পড়ুয়াদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণার কাজ এবং একইসঙ্গে অপরাধজনিত মামলায় দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির দিকে এগোতে আধুনিক ফরেন্সিক ল্যাব অত্যন্ত প্রয়োজন। উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলাগুলিকে জটিল ফরেন্সিক পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে কলকাতা অথবা কল্যানী-র ওপর নির্ভরশীল। আবার উত্তরবঙ্গ বা তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে কোন বড় বিপর্যয় ঘটে গেলে তার প্রভাব এসে পড়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ওপর। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটে গেলে মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কয়েক দশক পুরোনো এই মর্গের পরিকাঠামো বেশ পুরোনো। বর্তমানে ফ্রিজারে মৃতদেহ সংরক্ষনের স্থানও সংকুলান হয়ে পড়ে বড় বিপর্যয় বা দূর্ঘটনা ঘটে গেলে। তাই উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই গুরুত্ব আরোপ করে রুগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের গৌতম দেবের সঙ্গে আলোচনার পর অত্যাধুনিক ইউনিট তৈরির একটি পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করে তারা রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে প্রস্তাব আকারে পেশ করেছে। মেডিকেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে জি ২ অর্থাৎ তিন তল বিশিষ্ট ফরেন্সিক ইউনিটের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে মেডিকেল কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই তিন তল বিশিষ্ট ভবনের নিচের তলায় থাকবে মর্গ, তা আধুনিক পরিকাঠামো সম্পন্ন হবে। উন্নত ফ্রিজার ব্যবস্থা সম্পন্ন দেহ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ড্রয়ার থাকবে। প্ৰথম তলে অত্যাধুনিক ফরেন্সিক ল্যাব ও সংযুক্ত চিকিৎসক পড়ুয়াদের জন্য হবে স্মার্ট ক্লাস রুম। তৃতীয় তলে ফরেন্সিক বিভাগীয় চিকিৎসক অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের গবেষণা জনিত কাজের সুবিধার্থে বসার স্থান ও কক্ষ থাকবে।এছাড়া নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত থাকবে র্যাম্প ও লিফটের ব্যবস্থা।এতে ময়নাতদন্তের পর দেহ চিকিৎসক পড়ুয়াদের পঠন পাঠন ও গবেষণার জন্য র্যাম্পের সাহায্যে সুরক্ষিতভাবে ল্যাবে স্থানান্তরিত করা যাবে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো প্রকল্পটি প্রায় কয়েক কোটি টাকার। এই ল্যাব পুরোনো মর্গের স্থানেই উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা গিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। বর্তমানে কয়েক দশক পুরনো এই মর্গ প্রাচীন পরিকাঠামো নিয়েই চলছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মতো উত্তরবঙ্গের চিকিৎসা ক্ষেত্রে এপিসেন্টার মর্গের পরিকাঠামো বয়সের ভারে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। ফ্রিজারে দেহ সংরক্ষণের ড্রয়ারের সংখ্যা ১৪টি। এরমধ্যে আটটি ছিল কোভিডের সময় ছয়টি। পুরোনো ২২টি ফ্রিজিং ড্রয়ারে বিকল হয়ে রয়েছে। সম্প্রতি সিকিম বিপর্যয়ের সময়তে প্রচুর সংখ্যক অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ ভেসে আসায় কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হয় তার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে। পাশাপাশি আধুনিক ল্যাব হলে পুলিশের তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ভিসেরা টেস্টের মতো পরীক্ষাগুলিও করা সম্ভব হবে। কারণ ভিসেরা টেস্টের জন্য মৃতদেহের যে সমস্ত অঙ্গ সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে তার আধুনিক ফ্রিজার ও পরিকাঠামো না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। পাশাপাশি কলকাতার ল্যাবের উপর গোটা রাজ্যের চাপ থাকায় তার রিপোর্ট হাতে মিলতেও অনেকটা সময় লেগে যায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির।
আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব হলে ভিসেরা থেকে ডিএনএ-র মত টেস্ট করা যাবে উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে কলেজে। এতে আরও দ্রুত জটিল মামলার অপরাধী শনাক্তকরণ থেকে তদন্ত নিস্পন্ন করতে পারবে পুলিশ। এই বিষয়ে ফরেন্সিক বিভাগীয় প্ৰধান ডাঃ জগদীশ বিশ্বাস বলেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের ওপর সব সময় বাড়তি একটা চাপ রয়েছে। যেকোনো ধরনের বিপর্যয় বা বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেলে দেহ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হয়। সম্প্রতি সিকিম বিপর্যয় এবং বেশ কিছুদিন আগে দোহামনিতে ঘটে যাওয়া ট্রেন দুর্ঘটনার সময় একটা আশঙ্কা তৈরি হয়।পাশাপাশি বিভাগীয় প্রধানের দাবি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই ল্যাব চালু হলে গোটা উত্তরবঙ্গের চিকিৎসা ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠবে বড় মাইলস্টোন। কারন চিকিৎসা ক্ষেত্রে ফরেন্সিক সংক্রান্ত গবেষণা কাজ প্রসারিত হবে। চিকিৎসক পড়ুয়াদের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ আরও উন্মুক্ত হবে। পুলিশি তদন্তে গতি মিলবে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি সুবিধে পাবে। আধুনিক ল্যাবের প্রস্তাব রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়েছে।