🔺🔺চিকিৎসা পরিসেবা ঘিরে সমস্যা অব্যাহত। দ্রুত চিকিৎসকদের আন্দোলনের রূপরেখা বদলে অধিক দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলছে শহরের বিবেচক মহল।এক সপ্তাহ পেড়িয়ে সোমবারও চিকিৎসকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ঘিরে রুগি হেনস্থা
🔻দ্রুত চিকিৎসক আন্দোলনের রূপরেখা বদলে কর্মবিরতি থেকে সরে এসে চিকিৎসা পরিষেবার স্বাভাবিক করা প্রয়োজন চিকিৎসকদের দাবি বিবেচক মহলের
শিলিগুড়ি। চিকিৎসা পরিসেবা ঘিরে সমস্যা অব্যাহত। দ্রুত চিকিৎসকদের আন্দোলনের রূপরেখা বদলে অধিক দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলছে শহরের বিবেচক মহল।এক সপ্তাহ পেড়িয়ে সোমবারও চিকিৎসকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ঘিরে রুগী হেনস্থা অব্যাহত। আন্দোলনের জের টেনে সোমবার পর্যন্ত কর্মবিরতি বহাল ছিল পিজিটি চিকিৎসকদের। যার ফলে বহির্বিভাগের প্রতিটি বিভাগে চিকিৎসার জন্য দূর দূরান্ত থেকে আসা রুগীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। প্রায় নিত্যদিন বহু রুগীকে বিনা চিকিৎসায় ফিরতে হচ্ছে মেডিকেলের বহির্বিভাগে অনিয়মের কারনে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভিন রাজ্য বিহার সিকিম এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আসা রুগীদের চাপ এসে পড়ে মেডিকেলের ওপর। হাসপাতালে রুগী চাপ সামলে সাধারণ ভর্তি এড়িয়ে জরুরী ভিত্তিতে ভর্তির পথে হাঁটছে উত্তরবঙ্গের টারসিয়ারি হাসপাতাল হিসেবে পরিগণিত উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। মূলত উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ-এর দাবি সিনিয়র চিকিৎসকেরা আউটডোরে চিকিৎসা করছে। তবে সমস্যা হচ্ছে রুগীদের কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক জানিয়েছেন- সকালে বহির্বিভাগে রুগীদের লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছেন। কারণ সিনিয়র চিকিৎসকেরা হাসপাতালে ভর্ত্তি রুগী এবং ওয়ার্ডের রুগীদের রাউন্ড সেরে আউট ডোরে গিয়ে বসছেন। অন্যান্য সময়তে এই এক দু’ঘণ্টা পিজিটি চিকিৎসকের আগেভাগে গিয়ে রুগী দেখা শুরু করে।সেখানে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান তিনি। আর ঠিক সেকারণেই দেখা যাচ্ছে মেডিকেল বহির্বিভাগ গুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু হচ্ছে সকালে বেশ কয়েক ঘন্টা দেরিতে। যার ফলস্বরূপ রুগীদের লম্বা লাইন পড়ে যাওয়ায় বহির্বি বিভাগের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্ত রুগীদের দেখা সম্ভব হচ্ছে না চিকিৎসকদের। ফলে প্রতিদিনই একটা বড় অংশের রুগীদের বিনা চিকিৎসায় ফিরতে হচ্ছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে। ধারাবাহিকভাবে এই আন্দোলনের জের টানতে হচ্ছে হাসপাতালের আভ্যন্তরীণ চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রেও। একাধিক বিভাগে রুগীদের অস্ত্রোপচারের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষার কথা জানানো হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন অস্ত্রপচারে লম্বা তালিকা রয়েছে,এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক না থাকার কারণে আগামী মাসের আগে অস্ত্রপচার সম্ভব নয়। আর চিকিৎসকের এই পরামর্শে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে দূর দূরান্ত থেকে আসা রুগী ও রুগী পরিজনদের। কারণ উত্তরবঙ্গের মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল টারসিয়ারি হাসপাতাল হিসেবে পরিগণিত হয়। ফলে জটিল থেকে জটিল মুমূর্ষু রুগীদের জেলার হাসপাতাল গুলি থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শুধু উত্তরবঙ্গের জেলা নয় ভিন রাজ্য সিকিম, বিহারের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের থেকে আসা রুগীদের চিকিৎসা পরিষেবার বাড়তি চাপ সামাল দিতে হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে।একদিকে বহির্বিভাগে মেডিকেলে লম্বা লাইনে তপ্ত রোধে দাঁড়িয়ে থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে রুগীদের। আবার প্রাথমিক চিকিৎসার পর অধিকাংশ রুগীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি রুগী পরিজনেদের। আন্দোলনের জেরে চিকিৎসক সংকটের কারনে জরুরী রুগী ছাড়া সাধারণ রুগীদের হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে চলছে চূড়ান্ত স্ক্রিনিং। রুগী পরিজনেদের দাবি সাধারণ রুগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দিয়ে বেশ কিছুদিন পর পুনরায় ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর এই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে প্রাণ রক্ষায় হাসপাতালের দরজা থেকে ফেরত যাওয়া রুগী ও রুগী পরিজনদের অসহায়তা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছে শিলিগুড়ির বিবেচক নাগরিক মহল। শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবী অত্রি শর্মা এই চিকিৎসা পরিসেবা ঘিরে রুগী হেনস্থার বিষয়ে সরব হয়ে জানান- আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে গোটা রাজ্যের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন আপামর নাগরিক ঘটনায় জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে একত্রিত আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। নিহত মহিলা চিকিৎসকের পরিবারকে ন্যায্য বিচার পাইয়ে দিতে সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে এই লড়াইতে শরিক হয়েছেন। ফলে একজন সাধারণ মানুষও যাতে চিকিৎসা পরিষেবায় থেকে বঞ্চিত না হন চিকিৎসকদেরও সে বিষয়টিকে অন্যতম প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন ধারাবাহিকভাবে কর্মবিরতির পথে হাঁটছেন পিজিটি চিকিৎসকেরা। এতে দূর দূরান্ত জেলা থেকে আসা বিশেষ করে আর্থিক ভাবে দূর্বল মানুষ যারা সম্পূর্ণরূপে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার ওপর নির্ভরশীল সেসব রুগী এবং রুগী পরিজনেদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এই সমাজ চিকিৎসকদের ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছে ফলে তাদের
কাছে আরও অনেক বেশি বিবেচনামূলক এবং সহানুভূতিশীলতার আশা রাখেন সাধারণ মানুষ। আমরা চাই অবিলম্বে বিচার হোক প্রয়োজনে চিকিৎসকেরা সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন,তবে যে সাধারণ মানুষ তাদের সঙ্গে সমব্যথী সে আম জন সাধারণকে স্বাস্থ্য পরিসেবায় অসহায়তার মুখে পড়তে হলে অজান্তে অন্যায় করা হবে। আন্দোলনে যে নকশায় কর্মবিরতি চলছে সে রূপরেখা বদল করে এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের কাছে আরও অধিক দায়িত্বশীলতার আশা রাখবো। দ্রুত চিকিৎসা পরিসেবা স্বাভাবিকভাবে চালু করা দরকার। আইনজীবির সংযোজন তারা যেভাবে দাবী করেছেন সেভাবে এখন তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে রয়েছে। চিকিৎসকদের কাছে দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক করার আবেদন করছে উত্তরবঙ্গ তথা শিলিগুড়ির বাণিজ্যিক মহলও।
নর্থ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিস -এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় টিব্রুওয়াল জানান- সিবিআই তদন্ত করছে। এই নৃশংস ঘটনার ন্যায় বিচার করে দ্রুত দোষীদের ফাঁসির সাজা হোক তা চায় গোটা রাজ্যবাসী। ফলে সে কারণে আন্দোলন যে পথে চলছে চলুক। কিন্তু দূর দূরান্ত সহ বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। তাদের অনেকের আর্থিক স্থিতি এতটাই খারাপ যে বাইরে বেসরকারি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সম্ভব নয়। রুগীদের কাছে চিকিৎসক ঈশ্বর ফলে আমরা সমস্ত মহল থেকে চিকিৎসকদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবাকে স্বাভাবিক করে তোলেন তারা। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে রুগীদের তা স্বীকার করে নিয়েই উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক জানিয়েছেন জরুরী বিভাগে ১০০ শতাংশ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। অন্যান্য বিভাগে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রুগীদের চিকিৎসা চলছে। এটা ঠিক যে পিজিটি চিকিৎসকেরা আন্দোলনে নামায় চিকিৎসক সংকটের কারনে পরিষেবা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। যেখানে কোনো ওয়ার্ডে পাঁচজন চিকিৎসকের প্রয়োজন সেখানে দুজন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করে রুগীদের সে পরিষেবা প্ৰদানে চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। একই ভাবে শহরের শিক্ষকমহলও এই বিষয়ে সহমত পোষণ করছে। স্বাস্থ্যের মতো প্রাণদায়ি পরিষেবায় টানা এক সপ্তাহের বেশি কর্মবিরতি বহু রুগীর প্রাণ সংকটের মুখে
ঠেলে দিতে পারে। কারণ কখন একজন সাধারণ রুগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে গিয়ে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাবে তা বলা সম্ভব নয় কারোর পক্ষেই।
আমরা বহু ক্ষেত্রে দেখেছি চিকিৎসকেরা নিজেরাই তা জানান যে রুগীকে আগে থেকে দেখে সমস্তটা অনুমান করা যায়না। এই বিষয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডিন তথা চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র অন্যতম সদস্য সন্দীপ সেনগুপ্ত জানান- সিনিয়র চিকিৎসকেরা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। আইএমএ-র কর্মবিরতির দিনও জরুরী পরিষেবা দেওয়া হয়েছে রুগীদের। সেভাবেই জরুরী চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হবে। মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং বহির্বিভাগে সমস্যা হচ্ছে কিছুটা ঠিকই।লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে। তবে একটু একটু করে পরিস্থিতি ও আন্দোলনের রূপরেখা বদলাচ্ছে। তিনি বলেন একদিকে যেমন আমরা চাই যে মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে বর্বরোচিত ঘটনা হয়েছে তার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক একই ভাবে জরুরী পরিষেবা যতটা স্বাভাবিক রাখা যায় সে প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের। এটা ঠিক কম সংখ্যায় চিকিৎসক পরিষেবা প্রদানে থাকায় লম্বা লাইন পড়ছে রুগীদের, তবে আমরা আশা করছি আস্তে আস্তে পরিষেবা স্বাভাবিকের দিকে যাবে।