🔺🔺স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ১৩মাসের মাথায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক রায় দিলো শিলিগুড়ি আদালত। নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ফাঁসির সাজার দাবিতে অনড় রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জী।
ঘটনা রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার কেস অ্যাখ্যা দিয়ে রাজ্যের বিশেষ আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি মৃত্যুদণ্ডের রায় অ্যাডিশনাল সেশন জর্জ (পক্সো কোর্ট) আদালতের। মুখ্যমন্ত্রী দোষীর মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেছেন তা করেছেন তিনি, আমার মেয়ের আত্মার আজ শান্তি পাবে।সিসি ক্যামেরা,ফরেন্সিক, নির্যাতিতার পোশাকের সঙ্গে অভিযুক্তের পোশাক চুলের নমুনা ডিএনএ টেস্ট, ক্যামোফেসিয়াল টেস্ট, সাইকেল প্যাটার্ন এই মামলার অন্যতম তথ্য প্রমাণ হিসেবে পুলিশ এবং সরকারি আইনজীবী আদালতে পেশ করে
শিলিগুড়ি। স্কুল পড়ুয়া নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ১৩মাসের মাথায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের ঐতিহাসিক রায় দিলো শিলিগুড়ি আদালত। নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ফাঁসির সাজার দাবিতে অনড় রাজ্যের পক্ষের আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জী।
ঘটনা রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার কেস অ্যাখ্যা দিয়ে রাজ্যের বিশেষ আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি শুক্রবারে মৃত্যুদণ্ডের আর্জি জানান শিলিগুড়ি অ্যাডিশনাল সেশন জর্জ (পকসো কোর্ট)-এর বিচারপতির কাছে। মামলার গুরুত্বভার অনুযায়ী বিবেচনার জন্য একদিনের অতিরিক্ত সময়ও নেয় শিলিগুড়ি অ্যাডিশনাল সেশন জর্জ (পকসো কোর্ট)-এর বিচারপতি অনিতা মেহেরোত্রা মাথুর। এই মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে রাজ্যের তরফে নিযুক্ত বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি জানান নৃশংসভাবে খুন করা মেয়েটিকে। এই অপরাধের ক্ষেত্রে ধর্ষণের জন্যই নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। ৩০২ নাবালিকাকে খুন ও সিক্স অফ পকসো নাবালিকাকে ধর্ষণ এই দুটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষনা করেছেন শিলিগুড়ি আদালতের পকসো কোর্ট। একই সঙ্গে নির্যাতিতা নিহত নাবালিকার পরিবারকে ১০লক্ষ টাকার জরিমানার রায় দিয়েছে আদালত।উল্লেখ্য গত ২১শে ২০২৩-এ বিকেল নাগাদ মাটিগাড়ার মোটাজোতের পরিত্যক্ত বাড়ি ও ঝোপঝাড়ের মাঝে ধর্ষনের পর স্কুল ইউনিফর্মে একাদশ শ্রেণির পাঠ্যরতা নাবালিকার মুখ ও মাথা থেঁতলে দেওয়া ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ কমিশনারের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা তদন্তে নেমে ধর্ষণের পর নৃশংস ভাবে খুনের মামলা রুজু করে কয়েক ঘন্টার মধ্যে কিলার যুবক মহম্মদ আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে। নাবালিকার ২১টি জায়গায় ক্ষতচিহ্ন মেলে। সরকারি আইনজীবী চ্যাটার্জি বলেন এক্ষেত্রে ধর্ষণের জন্য নাবালিকার মৃত্যু হয়।নাবালিকাকে অপহরন করে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। এরপর নাবালিকার পরিচয় মুছ দিতে মুখে আধেলা ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়। নাবালিকা মেয়ের নৃশংস মৃতদেহের অন্তোষ্টিক্রিযয়াও সারতে পারেনি পরিবার। তার আগেই দোষীর ফাঁসির দাবিতে আদালতে এসে শক্ত পাথর হয়ে লড়াইয়ে নামেন।১ বছর ১৪ দিনের টানা লড়াই চালিয়ে যান পরিবার। শনিবার সাজা ঘোষণার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। নিহত নির্যাতিতা নাবালিকার মা বলছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন ধর্ষন ও খুনে দোষিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে সে কথা রেখেছেন তিনি। রাজ্য সরকার নিযুক্ত করে দ্রুত মামলা নিষ্পন্ন করতে উল্লেখযোগ্য ভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষ আইনজীবী নিযুক্ত করে স্বল্প সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পন্ন করায় রাজ্য সরকারের ভূমিকায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহত নির্যাতিতা নাবালিকার মা ও পরিবার।এদিন সাজা ঘোষণার পর রাজ্য সরকারের বিশেষ আইনজীবীকে খাদা এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহক টুপি পড়িয়ে তারা সম্মাননা জ্ঞাপন করেন।ফাঁসির সাজার পর নাবালিকার মায়ের বলেন আজ আমার আত্মা শান্তি পেলো। আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। রাজ্য সরকার, পুলিশ প্রশাসন এবং শিলিগুড়ি আদালতের উপর আমাদের পূর্ন আস্থা ছিল প্রথম দিন থেকে। আদালত জুড়ে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে প্রত্যেকের মুখে মৃত্যুদণ্ডের সাজার পর ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি। প্রতিবেশী জানান ওই দোষী আব্বাসের দুটি স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে তা সত্ত্বেও এই ধরনের নরকীয়তা করেছে সে।
শিলিগুড়ি আদালতে একেবারে নজির বিহীন ভাবে এক বছরের মাথায় এত দ্রুততার সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি এর আগে হয়নি। এই বিষয়ে রাজ্যের এই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি বলেন- এই মামলার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে পুলিশ অত্যন্ত দ্রুত ও অতি সক্রিয়তার সঙ্গে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তবে বিরোধী পক্ষের তরফে হাইকোর্টে মামলা কেন দ্রুততার সঙ্গে হচ্ছে তা নিয়ে আবেদন করা হয় যদিও উচ্চ আদালত সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে মামলা খারিজ করে।তা না হলে আট থেকে সাড়ে আট মাস সময়ের মধ্যেই এই মামলা নিষ্পন্ন করা যেত। নাবালিকা মেয়েটির হাইমেন ছিড়ে ফেলা হয় যৌন নির্যাতনে।তিনি জানান এই ঘটনার সময়তেও উত্তরবঙ্গে বনধ ডাকা হয়। নানা ভাবে শহর জুড়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে কিন্তু রাজ্য চেষ্টা করে এবং যেকোনো ভয়াবহ ঘটনার সঠিক শাস্তির ক্ষেত্রে দিশা দেখাতে পারে। তিনি বলেন শুধুমাত্র মামলা একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে যাতে সাক্ষীরা ঘটনার বিবরণ ভুলে না যান। তিনি মনে করিয়ে দেন যে প্রসিকিউটার মামলা লড়ছে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ রোল আছে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে প্ৰথম থেকেই পুলিশের হারে মোক্ষম অস্ত্র হয়ে ওঠে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। কমিশনারেটের ওই এলাকার সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে স্কুল থেকে নাবালিকাকে সাইকেলে চাপিয়ে দোষী মোহাম্মদ আব্বাস ওই ঝোপঝাড়ে নিয়ে যায়। একজন কনস্টেবল সিসি ক্যামেরা এবং অভিযুক্তকে পরবর্তীতে আদালতে চিহ্নিত করে তার বয়ান ও অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে এই মামলার রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে নবম শ্রেণীর নাবকলিকার সাক্ষ্য। ২২জন সাক্ষী এবং বৈজ্ঞানিক একাধিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ৪ঠা সেপ্টেম্বর আদালত দোষী সাব্যস্ত করে অপরাধীকে।এই মামলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে ৫৭দিনের আগেই চার্জশিট পেশ করে পুলিশের তদন্তকারী অফিসার পরেশ বর্মন। তার দ্রুত সফল তদন্তের এই ভূমিকাকে পুলিশ কমিশনারেটের তরফে সংবর্ধিত করা হবে।উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করে ইট দিয়ে মাথা থেতলে খুনের ঘটনায় সাক্ষ্য প্রমাণের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক প্রমাণের উপর অধিক ভর করে তদন্তের গতিপ্রকৃতি এগোয় পুলিশ। অভিযুক্তের জামা কাপড় মাথার চুলের নমুনার ডিএনএন টেস্ট করে পুলিশ। নাবালিকার পোশাকের নমুনা পাঠানো হয় ফরেনসিকে। অভিযুক্ত যুবকের রক্ত মাখা জামাটির ফরেনসিকে ল্যাবোটরিতে পাঠানো হয়। যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নাবালিকার সঙ্গে কিলার যুবককে দেখা গিয়েছিল সে ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক টেস্ট ও সাইবার লাইট ব্লক সিস্টেম ব্যবহার করা হয় বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন। সরকারি আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি জানান, ৩০২, ৩৭৬, ৩৭৬এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। মামলায় সাইকেল প্যাটার্ন, ডিএনএ নমুনা ও ফরেন্সিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছে আদালত। তিনি বলেন সব মামলায় দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব রাজ্য আমাদের নিযুক্ত করে আমাদের পাবলিক প্রসিকিউটরদের যদি কাজটা সঠিক সময় শেষ করা যায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে বিচার মিলবে।
পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর জানান- গত বছর একুশে আগস্টে মেয়েটি স্কুল গিয়েছিল তারপর বাড়ি না ফেরায় বাবা অভিযোগ করে। সিটি টিভি অ্যানালাইজ করে সেই রাতেই গ্রেফতার করা হয় কয়েক ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনারের তরফে একটি বিশেষ টিম বানিয়ে লাগাতার এই মামলার কেস রিভিউ করা হয়। স্বাক্ষর দেশের পাশাপাশি তথ্য প্রমাণ ডিজিটাল ও ফরেন্সিক ব্যবহার করা হয়। একমাত্র এই মামলার ক্ষেত্রেই প্রথম সাইকেল প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি ব্যক্তির সাইকেল চালানো একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন রয়েছে সেটিতে ব্যবহার করা হয় উল্লেখযোগ্যভাবে এই মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে।এই সমস্ত কিছুর পর ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হয়েছে দোষীর।