🔻🔻 দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের ১০০ বছরের বেশি প্রাচীন জীবন্ত ইতিহাসের প্রতীক ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে নির্মিত টয়ট্রেনের লোকোমোটিভ বেবি সেবক ছুটবে এবারে পর্যটকদের সম্মুখে
শিলিগুড়ি। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের একশো বছরের প্রাচীন জীবন্ত ইতিহাসের প্রতীক ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে নির্মিত টয়ট্রেনের লোকোমোটিভ বেবি সেবক ছুটবে এবারে পর্যটকদের সম্মুখে। কার্শিয়াংয়ের নিরালা পাহাড়ের বুকে বসেই ব্রিটিশ লর্ড সাহেবে মস্তিষ্কপ্রসূত পরিকল্পনা বাস্তববায়নে পাহাড়ের বুক চিড়ে ছুটে চলা দার্জিলিং হিমালয়ান খেলনা ট্রেনের উত্থান। ১৮৮১ সালে পাহাড়ের বুকে ন্যারোগেজের লাইন বসিয়ে দার্জিলিঙ হিমালয়ান রেলের প্রতিষ্ঠা। ব্রিটিশ আমলের এই ঐতিহ্যবাহী খেলনা ট্রেন ভারতকে বিশ্বের দরবারে ইউনেস্কোর হেরিটেজ খেতাব এনে দিয়েছে। আর এবারে সেই শতাব্দি প্রাচীন ১০০ বছরের পুরনো ব্রিটিশ হাতে তৈরি লোকমোটিভ বেবী শেভক পুনরায় কু ঝিক ঝিক ছন্দে ছুটে চলবে ন্যারোগেজ লাইনে!ইতিমধ্যেই বয়সের ভারে জং ধরা কল কব্জায় কোথাও পড়েছে ধীর হাতে হাতুড়ি তো কোন খুঁটিনাটি যন্ত্র নতুন করেই যুক্ত হয়েছে। আস্ত ইঞ্জিনকে সচল করতেই কয়েক মাস যাবৎ তিনধরিয়া ওয়ার্ক শপে কালঘাম ছোটাতে হয়েছে রেলের কারিগরি কর্মীদের। তবে নির্দেশ মতো ১৯১৩সালের ইঞ্জিনকে সংস্কার করে পুনরায় পরীক্ষামূলকভাবে ট্র্যাকে ফেরানোর যুদ্ধ জয় কার্যত ঘোষিত। ইতিমধ্যেই টুকরো কাঠ কয়লা বেলচা দিয়ে ইঞ্জিনের জায়গামতো দিতেই কয়েক দফায় ওয়ার্কশপের ট্র্যাক ধরে ট্রায়াল রানে ছুটছে তা। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের আয়োজিত ঘুম ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করেই এই বিশেষ আকর্ষণ। আসলে বেবী সেভক জুড়ে রয়েছে জীবন্ত ইতিহাস তাই রেলের কাছে এই ১০০বছরের বেশী প্রাচীন খেলনা ট্রেনের ট্র্যাকে প্রথম ব্রিটিশ হাতে ছুটে চলা লোকমোটিভ কোনো ঐতিহাসিক মনিমুক্ত খচিত প্রাসাদের তুলনায় কম নয়! ইতিহাসের পাতা উল্টে যে তথ্য সামনে উঠে আসে তাতে ১৮৭৮ সালে কলকাতার সঙ্গে প্রথম শিলিগুড়ি মিটারগেজ লাইনের মধ্য দিয়ে রেল যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তবে শিলিগুড়ির মূল প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার দার্জিলিং কার্শিয়াংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এক কথায় অধরা দুর্ভেদ্য। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলকর্তারা বাণিজ্যিক প্রসার ও সমৃদ্ধির কারণেই রেলপথে দার্জিলিংকে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়।
জার্মানির ওরেনস্টাইন অ্যান্ড কপেল (ও এন্ড কে) দ্বারা নির্মিত ঐতিহ্যবাহী বেবি শেভক লোক ইঞ্জিনটি। ১৯১৩সালে পাহাড়ের পাকদন্ডি পেড়িয়ে প্রথম ছোটে খেলনা ট্রেনের ঐতিহাসিক অভূতপূর্ব এই আবিষ্কার বেবি শেভক লোকোমোটিভ। যদিও এই সাল নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে দার্জিলিং হিমালয়ের রেলের তরফে জানা গিয়েছে ইঞ্জিনটির গায়ে ১৮৮১ সাল লেখা থেকে থাকলেও আদতে তা ডিএইচআর-এর প্রতিষ্ঠা সালকে উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে ট্র্যাক ধরে ছোটা সম্ভব হয় ১৯১৩ সালেই। এরপর দীর্ঘবছরের তথ্য ষ্পষ্ট নয় রেলের। দার্জিলিং হিমালয়ের রেলের তথ্য অনুযায়ী ১৯৪৫ সালে পুনরায় তিন ধরিয়া ওয়ার্কশপে ইঞ্জিনটি সংস্কার করা হয়। ১৯৫৩সালে ভারতীয় রেলের দিল্লিতে শত বর্ষ যাপনের বিশেষ অনুষ্ঠানে এই ইঞ্জিনটিকে প্রদর্শনীর উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বর্তমানে এই বেবিসেবক লোকোমোটিভ ইঞ্জিনটি ঘুম মিউজিয়ামে সংরক্ষিত। সম্প্রতি পাগলাঝোড়ায় পাহাড় ধসের সময় আগস্ট মাস নাগাদ ইঞ্জিন টিকে ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষনের উদ্দেশ্যে তিন ধরিয়া ওয়ার্কশপে।
হেরিটেজ খেলনা ট্রেনের ঘুম ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে পর্যটকদের সামনে মিউজিয়ামে ট্র্যাক ধরে ছুটবে সংরক্ষিত ইঞ্জিনটি। প্রাচীন এই ইঞ্জিন মূল ট্র্যাকে ফেরানো সম্ভব নয়। শতাব্দী প্রাচীন এই ইতিহাসের দলিল হিসেবে বেবি শেভক পর্যটকদের চোখের সম্মুখে ছুটবে মিউজিয়ামে সংরক্ষণে। জানা গিয়েছে শনিবার ঘুম ফেস্টিভ্যালের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে হাজির হন রেলের জেনারেল ম্যানেজার সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। তাদের নির্দেশে রংসহ যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কার কার্য সম্পন্ন করে ট্রায়াল রান দিয়ে তৈরি রাখা হয়েছে এই প্রাচীন ইঞ্জিনকে। অপর দিকে এবছর দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের হেরিটেজ স্বীকৃতিরও ২৫ বর্ষপূর্তি হতে চলেছে। ফলে এবারের ঘুম ফেস্টিভ্যালে রয়েছে শেষ দিন পর্যন্ত পাহাড়ে ব্যাপক উন্মাদনা দেখা গিয়েছে। উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা জানান বেবী সেবক ভারতীয় রেলের ইতিহাস। রেলের তরফে ধারাবাহিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এই প্রাচীন ইঞ্জিন। ঘুম স্টেশনে পর্যটকদের সামনে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের উল্লেখযোগ্যতা তুলে ধরতে ইঞ্জিনটি সংস্কার করে তা ট্র্যাকে সংগ্রহে রাখা হয়। পর্যটকদের সামনে ধোঁয়া উড়িয়ে নির্দিষ্ট ট্র্যাক ধরে ছুটবে সংগ্রহে থাকা এই ইঞ্জিন সে করেন পুনরায় ইঞ্জিন কলকব্জে সরিয়ে ফেরানো হলো। রেলের তথ্য অনুযায়ী ১৮৮০ সালের ২৩শে অগাস্ট শিলিগুড়ি-কার্শিয়াংয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ন্যারোগেজ লাইন ধরে টয়ট্রেন চালু করেন ইংরেজরা। পরবর্তীতে দার্জিলিং পর্যন্ত লাইনে সম্প্রসারণ করে ১৮৮১ সালের ৪ঠা জুলাই শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত এই ন্যারোগেজ লাইন চালু হয়।যা ঐতিহাসিক সৃষ্টি। ৮৮ কিলোমিটার ন্যারো গেজ রেললাইনে আজও ধোঁয়া উড়িয়ে কতশত নস্টালজিয়াকে বহন করে ছুটে চলছে এক স্বপ্ন সফরের মতো হেরিটেজ টয়ট্রেন।