পুলিশের উপর গুলিকাণ্ডে ইসলামপুর আদালত লক আপে আগ্নেয়াস্ত্র হাতবদলের তথ্য সামনে আসতেই শিলিগুড়ি আদালতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জোড়ালো

শিলিগুড়ি

পুলিশের উপর গুলিকাণ্ডে ইসলামপুর আদালত লক আপে আগ্নেয়াস্ত্র হাতবদলের তথ্য সামনে আসতেই শিলিগুড়ি আদালতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জোড়ালো। আদালত চত্ত্বরের নিরাপত্তায় পুলিশ কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি সহ বিচারাধীন বন্দীদের হাজত থেকে আদালতে পেশের ক্ষেত্রে হ্যান্ডকাপ সহ সঠিক ভাবে এসওপি মান্যতার বিষয়ে পুলিশ কমিশনারেটের তরফে তদারকি শুরু।

 

শিলিগুড়ি।পুলিশের উপর গুলিকাণ্ডে ইসলামপুর আদালত লক আপে আগ্নেয়াস্ত্র হাতবদলের তথ্য সামনে আসতেই শিলিগুড়ি আদালতে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জোড়ালো। আদালত চত্ত্বরের নিরাপত্তায় পুলিশ কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি সহ বিচারাধীন বন্দীদের হাজত থেকে আদালতে পেশের ক্ষেত্রে হ্যান্ডকাপ সহ সঠিক ভাবে এসওপি মান্যতার বিষয়ে পুলিশ কমিশনারেটের তরফে তদারকি শুরু। উত্তরদিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখড়ি পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে নেমে রিভলভার থেকে দুই পুলিশকর্মীকে নিশানা করে তিন রাউন্ড গুলি চালায়। ঘটনায় আহত পুলিশ কর্মীর শিলিগুড়ির বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধী। এই ঘটনায় পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে করনদীঘির থানায় খুনের মামলার বিচারাধীন বন্দীকে ইসলামপুর আদালতে পেশ করা হয়। নিখুঁত পরিকল্পনামাফিক অপর পুলিশের খাতায় দাগি অপরাধী আব্দুল হুসেন পরিজন বেশে আদালতের লকআপের মধ্যেই অভিযুক্তের সঙ্গে দেখা করে। অভিযুক্ত সাজ্জাককে পূর্বের পরিকল্পনা মাফিক শীত নিবারনের গাঁয়ে দেওয়ার চাঁদরের নীচে আড়াল করে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পৌছে দেয়। আদালত চত্ত্বরে দাঁড়িয়েই অনায়াসে আগ্নেয়াস্ত্র হাত বদল নিছক কোনো ঘটনা নয়, বরং এই ঘটনা বিচারালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে। আর এতেই শিলিগুড়ি আদালতে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত পুলিশি শক্তিবৃদ্ধির দীর্ঘ সময়ের দাবি ফের জোড়ালো হয়ে উঠছে। একই সঙ্গে আদালতে চত্ত্বরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সিকিউরিটি অ্যানালাইসিসে নেমেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। বুধবার উত্তর দিনাজপুরের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা ইস্যুতে উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক হয় শিলিগুড়ি আদালতে। একদিকে সংশোধনাগারের জেল সুপার, কোর্ট ইন্সপেক্টরের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়ে বৈঠক হয়েছে এক দফায় শিলিগুড়ি আদালতের সমস্ত এজলাসের বিচারপতি ও উদ্ধতন আধিকারীকদের। অপরদিকে আসামিদের হাজত এবং হাজত থেকে আদালতে পেশের সময়তে সঠিকভাবে নিয়মাবলি পালনের ক্ষেত্রে ঢিলে ঢালা প্রবৃত্তি রুখে কড়াকড়ি ভাবে এসওপি পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মীদের। বিচারাধীনবন্দিদের হাজতে নজরদারি, আদালতের পেশের ক্ষেত্রে এবং হাজতে অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা করতে আসা পরিবার-পরিজনদের যাচাই, সমস্ত ক্ষেত্র গুলিতে এসওপি কড়াকড়িভাবে পালনের সঙ্গে আদালত চত্ত্বরে পুলিশি নিরাপত্তা কাঠামো নিয়ে পর্যালোচনা হয়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি রাকেশ সিং জানান শিলিগুড়ি আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। বিচারাধীন বন্দীদের হাজত এবং আদালতে পেশীর সময়তে আদালতের দায়িত্বরত পুলিশ কর্মীদের নির্দিষ্ট এসওপি অর্থাৎ স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর রয়েছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ পালনের নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। আবার পুলিশের অন্দরমহলেই আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে হাজত থেকে আদালতে পেশের সময়তে এসওপি অনুযায়ী অভিযুক্তকে যেভাবে কোমরের পেছনের অংশ অথবা হাতের নির্দিষ্ট স্থানে ধরে নিয়ে যাওয়ার নিয়মবিধি রয়েছে অনেক সময়তেই কনস্টেবল ও দায়িত্বরত পুলিশকর্মীদের সঠিকভাবে তা অনুসরন করতে দেখা যায় না। হালকা কায়দায় আসামিকে নিয়ে গিয়ে আদালতে পেশ করতে দেখা যায়। সেখানে যেকোন ধরনের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। শিলিগুড়ি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি অলক ধারার মুখে উঠে আসছে একই বিষয়। তিনি জানান আদালত চত্বরে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশ কর্মী মোতায়েন নেই। শিলিগুড়ি আদালতে যে সংখ্যক পুলিশকর্মী থাকা প্রয়োজন বর্তমানে সে তুলনায় সংখ্যাটা অনেকটাই কম।অধিকাংশ সিভিক ভলেন্টিয়ার নিযুক্ত করে রাখা হয়েছে। একাধিকবার এই বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটকে বারের তরফে জানানোও হয়েছে। অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আদালতে মোতায়েন পুলিশকর্মীদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয় সেসময় সমস্যা আরোও বেড়ে যায়। এমনকি কিছু সময় শুধুমাত্র পুলিশকর্মীর সংকটে হাজত থেকে আদালত এজলাসে বিচারাধীন বন্দীদের পেশ করা সম্ভব হয়না। তার বক্তব্য শিলিগুড়ি আদালতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়ে থাকে এখানে। এদিকে নিয়মিত কোর্ট ছাড়াও শিলিগুড়ি দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালতে রয়েছে কাস্টম কোর্ট,এনপিএস-এর মতো কোর্ট। আদালত সূত্রের খবর শিলিগুড়ি আদালতে প্রায় দেড় বছর আগে নাবালিকাকে অপহরণ করে ধর্ষন ও খুনের মামলাকে কেন্দ্র করে আসামিকে আদালতে পেশীর সময়তে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি সামালে রীতিমতো চাপের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। সম্প্রতি একাধীক বার বিভিন্ন সময়তে কখনও মাদক মামলার আসামিকে হাজত থেকে আদালতে পেশের সময়তে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে পুলিশকে। বিভিন্ন সময়তে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। শিলিগুড়ি আদালতের বারের তরফে তিনমাস আগে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটকে শিলিগুড়ি আদালতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েনের আবেদন জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে সহমত পোষণ করছেন শিলিগুড়ি আদালতের অন্যান্য বিশিষ্ট আইনজীবীরাও। এই বিষয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি ইস্ট রাকেশ সিং জানান- আমাদের স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিওর রয়েছে। এসওপি অনুসরণ করা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত চত্ত্বরে আরোও পুলিশি নিরাপত্তা শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলি পর্যালোচনা করে দেখছি। বারের সেক্রেটারি অলোক ধারা জানান সম্প্রতি শিলিগুড়ি আদালতে নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তবে আদালতের সীমানা প্রাচীলের জর্জর অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ফলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। বারের তরফে সংস্কারের বিষয়টি ইতিমধ্যেই পূর্ত দপ্তরকে জানানো হয়েছে।