শিলিগুড়ি। আইনজীবি যুবতীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেপ্তার আইনজীবী হবু স্বামী। বিয়ে ঠিক হতেই বাগদত্তা আইনজীবী যুবতীর ওপর লাগাতার পনের জন্য চাপ দিতে লাগে পেশায় আইনজীবী হবু স্বামী। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত আইনজীবী দেবাঞ্জন চক্রবর্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পৌঁছতেই তুমুল উত্তেজনায় ফেঁটে পড়লো শিলিগুড়িতে আদালত চত্ত্বরে আইনজীবিরা। বারের তরফে মামলা হাতে নিলেন না কোনো আইনজীবী। ধৃতকে আদালতে পেশির সময়তে অভিযুক্ত আইনজীবীর ঘিরে ধরে প্রায় মারমুখী হয়ে ওঠে আদালত চত্ত্বরে আইনজীবীরা।
আদালত অভিযুক্তের জামিন নাকোচ করে ১৪দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।২৬বছর বয়েসী শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবি যুবতী মেধা সাহার আত্মহত্যার ঘটনায় তোলপাড় হয়ে উঠেছে আইনজীবী মহল।
গত ৭ই জুলাই শিলিগুড়ি পুরনিগমের ১২নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা পাকুড়তলা মোড়ে নিজের ঘরে আইনজীবী যুবতীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরিবারে বাবা অনিপ সাহা ও মা সুতপা সাহার সঙ্গেই থাকতেন আইনজীবী যুবতী।সকাল গড়িয়ে গেলেও মেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় পরিবারেরর লোকেরা কু ভাবনা থেকেই ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে মেয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। এরপরই ঘটনাস্থলে পৌছায় পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ির পুলিশ। আত্মহণনকারী আইনজীবী যুবতীর সহকর্মী ও পরিজনেদের সূত্রে জানা গিয়েছে আইনি পড়াশুনোর সূত্রেই কলেজের সময় থেকে দেবাঞ্জনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে আইনজীবী যুবতী মেধা। বিগত তিন থেকে চার বছরের ঘনিষ্ট সম্পর্কের পর দুই পরিবারের সম্মতিতে শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবি যুবতী মেধা সাহার সঙ্গে বিবাহ স্থির হয় আইনজীবী দেবাঞ্জন চক্রবর্তীর। দুজনেই শিলিগুড়ি আদালতের বারের সদস্য। চলতি বছর ৮ই ডিসেম্বরে বিয়ে দিন নির্ধারিত হয় তাদের। সেসমত পরিবারে চলছিল বিয়ের প্রস্তুতি। আইনজীবী যুবকের পূর্বেও একবার বিবাহ হয়, এবং পরে বিয়ের কিছুদিনের মাথায় প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয় যুবক।

অভিযোগ অভিযুক্ত আইনজীবী দেবাঞ্জন বিয়ের পাকা কথার পর থেকেই লাগাতার আইনজীবি যুবতীর ওপর শারীরিক নির্যাতন থেকে যৌন হেনস্থা ও মানসিক ভাবে অত্যাচার চালাতো। যুবকের একাধিক মহিলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তাদের মাঝে প্রায়ই অশান্তি চরমে উঠতে লাগে। যুবতীকে রীতিমতো মারধোর করতো আইনজীবী যুবক।যুবতীর মা সুমনা সাহা জানান মেয়েকে বিয়ে করার জন্য ২৫লক্ষ টাকা ও ৫০০স্কোয়ার ফিটের একটি চেম্বার ও একটি ফ্ল্যাটের দাবি করে দেবাঞ্জন ও তার মা প্রীতি চক্রবর্তী। প্রথম দফায় ফ্ল্যাট, চেম্বার দিতে অস্বীকার করেন তারা। কিন্তু তাদের মেয়ের উপর চাপ দিতে লাগে অভিযুক্ত। যুবতীর পরিবার বাধ্য হয়ে মেয়ের বিয়ের কথা ভেবে পাঁচ লক্ষ টাকা দেয় অভিযুক্তকে। মা সুমনা দেবী বলেন তবে এরপর বাকি ২০লক্ষ টাকার জন্য তাদের মেয়েকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালাতে লাগে দেবাঞ্জন ও তার মা প্রিতি চক্রবর্তি। কিন্তু তার মেয়ের সঙ্গে বিবাহ ঠিক হওয়ার পরও অন্য আইনী পড়ুয়া ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে যুবক। আমার মেয়েকে দেবাঞ্জন জানায় টাকা না দিলে তার সঙ্গে বিয়ে করবে না সে। আর্থিক ভাবে অনেক বেশি স্বচ্ছল পরিবারের মেয়েকে পছন্দ তার,তার সঙ্গেই বিয়ে করতে চায়। যা আমার মেয়ে সহ্য করতে পারেনি।

আইনজীবী মেধা সাহা

৫ই জুলাই আইনজীবী যুবতী অন্য মহিলার সঙ্গে তার হবু আইনজীবী স্বামীর দার্জিলিং যাওয়ার বিষয়ে জানতে পেরেই তাদের পিছু নিয়ে দার্জিলিং আদালতে পৌছায়। সেখানে হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় অশান্তি বাঁধে মেধার সঙ্গে দেবাঞ্জনের। আইনজীবী যুবতীর উপর রীতিমতো চড়াও হয় হবু স্বামী। এরপরই ৬ই জুলাই শিলিগুড়ি আদালতে নিয়মিত কাজ করে যুবতি দুপুর নাগাদ শহরের একটি রেস্তোয়ায় অভিযুক্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সেখানে অশান্তি তুমূলে ওঠে। সে রাতে পরিবারের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া সেরে নিজ ঘরে ফোনে শেষ বারের মতো যুবকের সঙ্গে উত্যক্ত বার্তলাপের পরই আত্মহত্যা করে যুবতী। আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে আইনজীবী যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। টানা কয়েকদিন পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপন করে থাকার পর রবিবার সকালে শিলিগুড়ি থানায় আত্মসমর্পণ করে দেশবন্ধু পাড়া নিবাসী অভিযুক্ত আইনজীবী। এদিকে প্রেমিকার মৃত্যুর পরও একবারের জন্য হাসপাতাল কিংবা সৎকার্য্যে আসেনি হবু স্বামী। যাতে যুবতীর আত্মহত্যায় তার ইন্ধন যোগানোর সন্দেহ ক্রমশ দৃঢ় হয়ে উঠছে।
এদিকে পুলিশ রবিবার আইনজীবী যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করে। এরপর আইনজীবীরা একজুট হয়ে আদালত চত্ত্বরে হাজির হলে উত্তেজনা তুমূলে ওঠে। অভিযুক্তকেে ঘিরে মার মুখী হয়েে পড়ে আইনজীবীরা।

যদিও আদালতের পেশী সময়তে অভিযুক্ত দেবাঞ্জন পাল্টা জানায় মেধার পরিবার তাদের বিয়ে হোক কোনদিনই চাইতেন না। এদিকে ঘটনার বিষয়ে শিলিগুড়ি আদালতে বারের সম্পাদক অলক ধারা জানান মেধার মৃত্যুতে বারের আইনজীবীরা মর্মাহত। একটি তরতাজা প্রাণ চলে গেল যাতে পরোক্ষভাবে হলেও অভিযুক্ত আইনজীবীর যোগ রয়েছে।

মেধার প্রতি ন্যায়ের দাবিতে বারের তরফে কোন আইনজীবী অভিযুক্তের মামলা লড়বে না। তিনি সংযোজন করে বলেন বারের সদস্যের এভাবে আকস্মিক মৃত্যুর পর আদালতের আইনজীবিদের তরফে আয়োজিত শোক সমাবেশেও আসেনি আইনজীবী প্রেমিক যুবক। সরকারি আইনজীবি সুশান্ত নিয়োগী জানান এসিজেএম ফাস্ট কোর্ট ধৃতের জামিন নাকোচ করে ১৪দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি বিশিষ্ট আইনজীবী বিদিশা দে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। ঘটনার পর এখনও অধরা অভিযুক্ত যুবকের মা প্রীতি চক্রবর্তী। তদন্তের জন্য অভিযুক্তের পুলিশি হেফাজত চাননি শিলিগুড়ি থানার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারীক। এদিন তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে শিলিগুড়ি থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে তলব করে ১৯শে জুলাই সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

You cannot copy content of this page