পুরনিগমের ভূমিকার জেরে ফের অরিজিতের অনুষ্ঠানের ভ্যেনু নিয়ে জোড় বিতর্ক শহরে। স্টেডিয়ামের একাংশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিতকরনের পরও অনৈতিকভাবে অনুষ্ঠানের ছাড়পত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুরনিগমকে চিঠি আইনজীবীর। পুরনিগম জবাব না দিলে জনতার স্বার্থে আদালতে মামলার হুঁশিয়ারি আইনজীবী
শিলিগুড়ি। পুরনিগমের ভূমিকার জেরে ফের অরিজিতের অনুষ্ঠানের ভ্যেনু নিয়ে জোড় বিতর্ক শহরে। স্টেডিয়ামের একাংশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিতকরনের পরও অনৈতিকভাবে অনুষ্ঠানের ছাড়পত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুরনিগমে লিখিত অভিযোগ আইনজীবীর। অনুষ্ঠানে ঘিরে মানুষের জীবনহানির আশংকার উল্লেখ করে পুর দপ্তরের তরফে জবাব না মিললে জনতার স্বার্থে আদালতে মামলা দায়েরের হুঁশিয়ারি আইনজীবীর।স্টেডিয়ামের বর্তমান পরিস্থিতির মুখে পুরোনিগমের ভূমিকাকে নীতিহীন বলে দাগলেন শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ। বিধায়কের সাফ দাবি কিভাবে এই অনুষ্ঠানগুলি হচ্ছে? কাদের অনুমতিতে হচ্ছে বিধানসভায় তা তুলবো। ক্ষোভ শহরের বিবেচক মহলেও। বিক্ষুব্ধ ক্রীড়া মহল।
শিলিগুড়ি ক্রীড়া জগতের লিন্দে একটি মাত্র খেলার স্টেডিয়ামকে বানিজ্যিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন খোদ উত্তরবঙ্গ ক্রীড়া উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান কিংবদন্তি ফুটবলার শ্যাম থাপা। তার মন্তব্য স্টেডিয়ামে বহুদিন খেলাধুলো হয়না। সেখানে এ ধরনের অনুষ্ঠান ঠিক নয়। এটা সত্যি হৃদয় বিদারক। শিলিগুড়ি প্রাণকেন্দ্রে কাঞ্চনঝঙ্গা স্টেডিয়ামের একাংশকে বিপদজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে পূর্ত দপ্তর। সেখানে এ ধরণের অনুষ্ঠানে ছাড়পত্র একেবারেই অনৈতিক বলেই দাবি উঠছে। কাঞ্চনঝঙ্গা স্টেডিয়ামের খেলার মাঠকে এপ্রিল মাসে পরপর জলসার জন্য ছাড়পত্র প্রদানকে ভালো চোখে দেখছে না শহরের ক্রীড়া প্রেমীরা।অনুষ্ঠানের আয়োজন এত সংখ্যক মানুষের জমায়েত হুল্লোড়ে মাঠের ঘাস খেলার উপযোগী থাকবে না। ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে আদালত পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন আইনজীবী।
শিলিগুড়ির আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী অখিল বিশ্বাস জনতার স্বার্থের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ইতিপূর্বেই ১৬ই মার্চ অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন পুরনিগমে। দুটি বাণিজ্যিক সংস্থাকে কি শর্তে স্টেডিয়ামে খেলার মাঠে জলসা করার অনুমতি দেওয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ম তুলেছেন তিনি। আইনজীবীর বক্তব্য “স্টেডিয়াম মাঠে ৪ঠা এপ্রিল সংগীতশিল্পী অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্ট সম্পূর্ণভাবে দুটি বাণিজ্যিক সংস্থার অনুষ্ঠান। সরকারি অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমার বলার এক্তিয়ার নেই, তবে বানিজ্যিক বিনোদন মূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান শহরের অন্যত্রও হতে পারে। তা থেকে কোটি কোটি টাকার লাভ যাবে উদ্যোক্তাদের কোষাগারে। আইনজীবী বলেন ক্রীড়া প্রেমী হিসেবে বলছি খেলার স্টেডিয়ামে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজনে মাঠের ক্ষতি হবে। পাশাপাশি যখন সরকারের পূর্ত দপ্তর ইতিপূর্বেই সমীক্ষা করে স্টেডিয়াম ও গ্যালারির একাংশকে বিপদজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছে সেসময় প্রায় ২০হাজারের কাছাকাছি দর্শকাসন নিয়ে স্টেডিয়ামে এ ধরনের অনুষ্ঠান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন।” আইনজীবী সাফ বক্তব্য কনসার্টের শ্রোতা ও শহরের নাগরিক উভয়ের নিরাপত্তা আশংকার মুখে পড়তে পারে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেলে তার দায়ভার কে নেবে? সঙ্গীতানুষ্ঠানে বাইরে থেকে প্রচুর শ্রোতারা আসবেন। শিলিগুড়ি শহরের যানজটের যে পরিস্থিতি তাতে শহরের প্রাণকেন্দ্রে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠান ঘিরে অনুরাগীদের ভীড় জমবে এতে গোটা শহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার আশংকা ব্যক্ত করেও চিঠিতে পুরনিগমকে সাফ জানিয়েছেন আইনজীবী। সোমবারের মধ্যে পুরনিগমের তরফে এ বিষয়ে জবাব না মিললে আদালতের জনগনের স্বার্থে আইনি মামলা দায়ের করা হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আইনজীবী। আইনজীবীর আশঙ্কাকে যে উড়িয়ে দেওয়া যায়না তা খুব ভালো ভাবে জেনেই প্রায় নিশ্চুপ অবস্থানে পুলিশ প্রশাসন। তবে স্টেডিয়াম ইস্যুতে পুরনিগমের ভূমিকাকে সম্পূর্ণ নীতিহীন অ্যাখ্যা দিয়ে আসরে বিধায়ক। শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ বলেন ” কিভাবে এই অনুষ্ঠানগুলি হচ্ছে? কাদের অনুমতিতে হচ্ছে?বিধানসভায় তা তুলবো। মাঠ পর্যবেক্ষণ করে তিনি জানান মুখ্যমন্ত্রী সভা ঘিরে মাঠের যে ক্ষতি হয়েছিল তা এখনও সারাই হয়নি, মাঠজুড়ে গর্ত রয়েছে। বিধায়কের মন্তব্য শিলিগুড়ি শহর খেলার মাঠ নিয়ে পুরনিগমের একটা নীতি হওয়া দরকার। তার বদলে যদি এ ধরনের অনুষ্ঠান হতে থাকে তাহলে মাঠ নষ্ট হবে, আবার মাঠ সংস্কারের নামে প্রচুর অর্থ খরচ হবে। এই লম্বা প্রক্রিয়ায় ফলে যেটা হবে তা হলো দীর্ঘদিন খেলা বন্ধ থাকবে। বক্তব্য সংযোজন করে শঙ্কর বলেন ক্ষমতার দম্ভে এখানে শাসকেরা বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করেন না। এ শহর থেকে ঋদ্ধিমান উঠে এসেছে, রিচার উদাহরণ রয়েছে। পুরনিগমের ভূমিকায় আগামী দিনে আর এ শহর থেকে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় বেড়িয়ে আসতে পারবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্মও উঠছে। পুর বোর্ডের ভূমিকাকে কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিধায়কের মন্তব্য এই বোর্ড পরিসেবা, উন্নয়ন সবেতেই ব্যর্থ, এখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে আগামি দিনে খেলার সম্ভাবনা গুলোকেও নষ্ট করে দিচ্ছেন তারা।”
শহরের কেন্দ্রস্থলে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান হলে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে শহরের হিল কার্ট রোড, সেবক রোড সহ মুখ্য সড়কগুলিতে সে আশংকায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে শহরবাসী। কারন বিগত এক বছরে বিভিন্ন সময়তে শহরের উৎসব, অনুষ্ঠান থেকে সরকারি সভা, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ঘিরে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার ছবিটা সুখদায়ক নয়, বরং যানজটের চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে প্রতি পদে আম সাধারণকে।
যদিও কাঞ্চনঝঙ্গা স্টেডিয়াম ঘিরে তর্জার সূত্রপাত ভাষা দিবসে স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে। মুখ্যমন্ত্রী সভাকে কেন্দ্র করে খেলার মাঠের একাধিক গর্ত ও ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তা চর্চিত হয়ে ওঠে। চাপের মুখে ১লা এপ্রিলের মধ্যে স্টেডিয়াম মাঠ খেলার উপযোগী করে তোলার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন মেয়র গৌতম দেব। তবে নিজ চ্যালেঞ্জ ঘিরেই এবারে বেজায় বেকায়দায় পড়েছেন মেয়র। কারন ১লা এপ্রিলের মধ্যে মাঠ সংষ্কার করে খেলা উপযোগি করে তোলার কথা বললেও এ মাসে ৪ঠা এপ্রিল ও ২২শে এপ্রিল পুরনিগমের তরফে দুটি কনসার্ট এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে কনসার্টের আয়োজন ঘিরে এপ্রিল মাস জুড়ে স্টেডিয়ামে খেলাধুলোয় পাকাপাকি তালা পড়ছে। শহরবাসি বিবেচক মহলের প্রশ্ম তবে কি বাণিজ্যিক স্বার্থে সুযোগ পাইয়ে দিতেই মেয়রের মাঠ সংস্কারের এই তৎপরতা। যদিও এ প্রসঙ্গে একাধিক সংবাদমাধ্যমের সম্মুখে দশক পূর্বের সালমানের খানের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের উদাহরণ টেনে দায় ঝাড়ছেন মেয়র। প্রশ্নের মুখে এপ্রিলে অনুষ্ঠান হলে মে থেকে আর কোনো বানিজ্যিক অনুষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হবে না তাও সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন মেয়র।